রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভয়ংকর প্রতিবেশী দম্পতি গ্রেফতার

সাত দিনের অপহৃত শিশু উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সহযোগিতার আড়ালে সাত দিনের শিশুকে অপহরণ করেছিলেন প্রতিবেশী দম্পতি। দাবি করেছিলেন ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ। না হলে নবজাতককে খুলনার রূপসা নদীতে ফেলে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তবে অপহরণকারীদের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে অপহৃত শিশুকে উদ্ধারসহ অপহরণকারী রুবেল ও তার স্ত্রী তানিয়াকে যশোরের অভয়নগর থেকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মিলি আক্তার ঢাকার ধামরাই থানার ঢুলিভিটার বাসিন্দা। স্থানীয় একটি বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন তিনি। গর্ভাবস্থায় স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় অসুস্থ শরীরে অন্যের বাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মিলি। তার অসুস্থতার সময় দুই মাস আগে পরিচিত রুবেল ও তানিয়া আফরোজ নামের এক দম্পতি নিয়মিত খোঁজখবরসহ নানা সহযোগিতার হাত বাড়ায়। ফলে তাদের সঙ্গে মিলির একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রুবেল ও তার স্ত্রী তানিয়ার কাছে নবজাতক সন্তানকে রেখে ওষুধ আনতে বাইরে যান মিলি। আর এ সুযোগে নবজাতক শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যান রুবেল ও তানিয়া।

তিনি জানান, এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মিলি। তিনি জিডিতে উল্লেখ করেন, পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢুলিভিটা বাজার কমিটির কাছ থেকে রুবেলের বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় গেলে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। ২৮ ফেব্রুয়ারি রুবেল মোবাইল ফোন চালু করে নবজাতক শিশুকে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মোবাইল বন্ধ করে দেন। পরে ১ মার্চ রুবেল অন্য একটি নম্বর দিয়ে মিলি আক্তারকে ফোন করে জানান, নবজাতক তার কাছে আছে। ফিরে পেতে হলে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে নবজাতককে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী মিলি আক্তার নবজাতক সন্তানকে ফিরে পেতে র‌্যাব-৪-এর সহায়তা চেয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ মার্চ রাতে র‌্যাব-৪-এর একটি দল যশোর জেলার অভয়নগর থানার আমতলায় অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী মো. রুবেল শেখ (৩৫) ও তার স্ত্রী তানিয়া আফরোজকে (২৩) গ্রেফতার করে। এ সময় অপহৃত সাত দিনের নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ভুক্তভোগী মিলি আক্তার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঠানপাড়ার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধামরাইয়ের ঢুলিভিটার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে আসছিলেন। ঢুলিভিটা বাজারের পাশে থাকার কারণে একই এলাকার ভাড়াটিয়া রুবেল ও তার স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিলি আক্তারকে রুবেল ফুফু বলে ডাকতেন। ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন মিলি। পরে ২৬ তারিখ সন্ধ্যায় রুবেল ও তার স্ত্রী ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় আসেন। অসুস্থ থাকায় নবজাতক শিশুকে রুবেল ও তার স্ত্রীর কাছে রেখে ওষুধ কিনতে যান মিলি। ওষুধ কিনে ২০ মিনিট পর বাসায় ফিরে ভুক্তভোগী মিলি আক্তার দেখেন রুবেল ও তার স্ত্রী বাসায় নেই। তার নবজাতক ছেলেও নেই।

জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল ও তার স্ত্রী র‌্যাবকে জানিয়েছেন, দুই থেকে তিন মাস ধরে ঢুলিভিটায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন তারা। রুবেল ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা বাজারে বিভিন্ন দোকান ও মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতেন না। পাওনাদাররা ধার পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকায় তিনি ঢুলিভিটা থেকে অন্যত্র যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কৌশলে তার নবজাতক শিশুকে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও করেন। পরে সুযোগ বুঝে নবজাতক শিশুকে নিয়ে বের হয়ে যান। ধামরাই থেকে প্রথমে বাসযোগে খুলনায় যান। সেখানে আত্মগোপনের জন্য তারা সুবিধামতো ভাড়া বাসা খুঁজতে থাকেন। পরে খুলনার অদূরে রূপসা নদীর অপর পাশে যশোরের আমতলায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার রুবেলের বিরুদ্ধে যশোরের অভয়নগর থানায় ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা রয়েছে। তিনি সাত থেকে আট বছর ঢাকায় গার্মেন্টকর্মীর পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজ করেছেন। রুবেল একাধিক বিয়েও করেছেন। গ্রেফতার তানিয়া আফরোজ একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তিন বছর আগে পরিবারের অমতে রুবেলকে বিয়ে করেন তিনি। এর পর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তারা বিয়ে করে ধামরাই ঢুলিভিটা এলাকায় বসবাস শুরু করেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর