শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থী খুন, গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের সামনে প্রায়ই আড্ডা দিতেন এলাকার উঠিত বয়সী তরুণদের দুটি গ্রুপ। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী মুশফিক তাজুন (১৮) ছিল জুনিয়র গ্রুপের। নাহিদ, শান্ত ও সাকিব গ্রুপ ছিলেন সিনিয়র। আড্ডা দেওয়ার ফাঁকে এই গ্রুপ সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এক গ্রুপের সদস্যরা অন্য গ্রুপের সদস্যদের গালিগালাজও করে। আগের সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সন্ধ্যায় জুনিয়র গ্রুপের সদস্য তাজুনকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন সিনিয়র গ্রুপের সদস্যরা। এ ঘটনায় সিনিয়র গ্রুপের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাজুনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। গ্রেফতাররা হলেন- মাহামুদুল হাসান নাহিন, ইয়ানুর রহমান শান্ত ও নাজমুস সাকিব। যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের দুলাভাই মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে ১৭ জনকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

বাকি আসামিরা হলেন- শফিক ওরফে হাতভাঙ্গা শফিক, মাহফুজ, সায়েম, মাইনুল, বিশাল, আবির, মোবাশ্বের ভূইয়া, অপূর্ব রায়, শাহরিয়া, মুশফিক, মেশকাত, আদনান, তন্ময়, নাঈম, সাগর ও ইমনসহ অজ্ঞাতনামা আরও চার/পাঁচজন। এদের প্রত্যেকের বয়স ১৬ থেকে ১৯ এর মধ্যে।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুল আলম বলেন, ঘটনার পরই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার তিনজনই সরাসরি খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, নিহত তাজুন গ্রুপের লোকদের সঙ্গে তাদের ঝগড়া বাধে। তখন তাজুন তাদের গালিগালাজ করে। সে কারণে তাজুনকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।

এদিকে তাজুনকে হারিয়ে শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা পপি বেগম। তার বাবা মোশারফ কাতার প্রবাসী। ঘটনার পর তাজুনের মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে মোশারফকে দ্রুত দেশে আসতে বলেন স্বজনরা। গতকাল দেশে ফিরে ছেলের লাশ দেখতে পান মোশারফ। এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনিও। স্বজনরা তাকে কোনোভাবেই সামলাতে পারছিলেন না।

নিহত তাজুনের চাচা মানিক হোসেন বলেন, আমার ভাতিজা বুধবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় আসে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসায়ই ছিল। সন্ধ্যার পর শাওন নামের একটি ছেলে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে দনিয়া কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে জানতে পারি, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ধারালো চাপাতি, চাকু, ছুরিসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে তাজুন ও তার বন্ধুদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। বিবাদীরা তাদের এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে ৪ নম্বর আসামি ধারালো ছুরি নিয়ে তাজুনের বাম পাশে বুকের নিচে ছুরিকাঘাত করলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এ সময় জড়িতরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তখন তার বন্ধুসহ অন্যান্য পথচারীরা তাজুনকে উদ্ধার করে দনিয়ার সালমান হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু অবস্থা খারাপ হওয়ায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তাজুন পরিবারের সঙ্গে জুরাইনের মুরাদপুর মাদরাসা রোডের ৮২/২ বাসায় থাকত। গতকাল ঢামেক মর্গে ময়নাতদন্তের পর তাজুনের লাশ যাত্রাবাড়ীতে নেওয়া হয়। সেখানেই তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুপুরের দিকে গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে নেওয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর