বুধবার, ২৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছোট স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে আগ্রহ

টিকে থাকতে ব্যবসায়ীদের নতুন পরিকল্পনা

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

আন্তর্জাতিক স্ক্র্যাপ জাহাজের বাজারে কয়েক বছর ধরে বড় আকারের জাহাজ আমদানি করে আসছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু করোনা মহামারি, ডলার ও এলসি সংকটের পর থেকে সেই ধারাবাহিকতা আর নেই। দীর্ঘদিন ধরে এলসি বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলো কিছু এলসি দিলেও সেগুলো দিয়ে বড় জাহাজ কেনা যাচ্ছে না। ফলে ব্যবসায় টিকে থাকতে ছোট জাহাজ আমদানির দিকে ঝুঁকছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

২০২১ সালে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে জাহাজভাঙা শিল্পে শীর্ষে উঠে আসে বাংলাদেশ। তবে ২০২২ সালের পর এলসি ও ডলার সংকটের কারণে এই শিল্পে দুর্দিন নেমে আসে। বাংলাদেশের জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলো একের পর এক বন্ধ হতে থাকে। চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলো ছোট আকারের এলসি দেওয়া শুরু করে। কিন্তু তা দিয়ে বড় জাহাজ কেনা যাচ্ছে না। ফলে ভারতসহ অন্য দেশের ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় জাহাজ কিনে নিচ্ছেন। বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ১৫১টি, ২০২১ সালে ২৮০টি, ২০২০ সালে ২২৮টি এবং ২০১৯ সালে ২০৬টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০২১ সালে আমদানি করা জাহাজের মোট ওজন ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৭ টন হিসেবে প্রতিটি জাহাজের গড় ওজন ৯ হাজার ৭৪৫ টন। ২০২২ সালে আমদানি করা ১১ লাখ টন জাহাজের প্রতিটির গড় ওজন ৭ হাজার ২০০ টনের কাছাকাছি।

এদিকে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি করা হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৮ টনের ৩১টি জাহাজ, যেগুলোর গড় ওজন মাত্র ৫ হাজার ৩৭৯ টন। অর্থাৎ দিন দিন বাংলাদেশে আমদানি করা স্ক্র্যাপ জাহাজের ওজন কমছে। ছোট আকারের জাহাজ কেনার কারণে এমন হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিএসবিআরএ সভাপতি আবু তাহের জানান, এলসি না পেয়ে গত বছরের শেষদিকে অনেক ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে। এ বছরের শুরু থেকে ব্যবসায়ীরা কিছু এলসি পাচ্ছেন। কিন্তু সেগুলো খুবই ছোট আকারের। এগুলো দিয়ে বড় জাহাজ কেনা সম্ভব নয়। তাই অন্তত টিকে থাকার জন্য হলেও কিছু ব্যবসায়ী ছোট আকারের স্ক্র্যাপ জাহাজ কিনছেন। এতে আন্তর্জাতিক স্ক্র্যাপের বাজারে বাংলাদেশের অধিপত্য ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বেলজিয়ামভিত্তিক এনজিও শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফরমের তথ্য বলছে, জাহাজভাঙা শিল্পে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ভারত আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ২০২২ সালে ১২৭টি, ২০২১ সালে ২১০টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করে। অর্থাৎ গত দুই বছরে ভারত ৩৩৭টি স্ক্র্যাপ জাহাজ কিনেছে। আর বাংলাদেশ কিনেছে ৪৩১টি। বিএসবিআরএ নেতারা বলছেন, গত কয়েক বছরে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ ও ভারত কাছাকাছি অবস্থান করলেও ওজনের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে থাকত। কারণ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সব সময় বড় জাহাজ কেনার চেষ্টা করেন। কিন্তু গত কয়েক মাসে একদিকে ব্যাংক বড় এলসি দিচ্ছে না, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়তি এবং ফ্রেইট চার্জ বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ পরিত্যক্ত হওয়ার হার কমে গেছে। স্ক্র্যাপ জাহাজের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই ছোট জাহাজ কিনছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্কের ব্যবসায়ীরা ওজনের দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিএসবিআরএ সচিব নাজমুল ইসলাম জানান, জাহাজের আকার ছোট হয়ে যাওয়ায় এই শিল্প থেকে স্ক্র্যাপ সরবরাহের পরিমাণ কমে গেছে। মাত্র তিন বছর আগেও যেখানে সীতাকুন্ডের উপকূলে শতাধিক জাহাজভাঙা ইয়ার্ড গড়ে উঠেছিল, সেখানে বর্তমানে সক্রিয় আছে ৩৫-৪০টি।

স্ক্র্যাপের সরবরাহ কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়ছে দেশের রডের বাজারে। পাশাপাশি এই স্ক্র্যাপ জাহাজগুলোতে থাকা ফার্নিচার এবং অন্যান্য ধাতুর পরিমাণও কমে গেছে। ফলে এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের মুখে পড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর