শিরোনাম
শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু

♦ ২৪ মাসে মশার প্রজনন স্পট বেড়েছে ৮ গুণ ♦ আলোর মুখ দেখছে না চসিকের মশা মারার ক্র্যাশ প্রোগ্রাম

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীতে ২৪ মাসের ব্যবধানে মশা প্রজননের স্পট বেড়েছে ৮ গুণ। বর্তমানে নগরে ৪৩৫টি মশা প্রজনন স্পট চিহ্নিত হয়েছে। অথচ দুই বছর আগেও নগরে মশা প্রজনন স্পট ছিল মাত্র ৫৭টি! মশা প্রজনন স্পট বৃদ্ধি পেলেও তা নিধনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে নিজেদের কার্যক্রম থেকেও জনগণের সচেতনতাকে জোর দিয়েছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, মশার উপদ্রব কমাতে জনগণকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ১০০ জনের টিম দিয়ে প্রতিদিন ১০টি ওয়ার্ডে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো হচ্ছে। মূলত এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে হয়। তাই নগরবাসীকেই সচেতন হতে হবে। চসিকের তথ্য অনুযায়ী, নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের সবচেয়ে বেশি মশার প্রজনন স্পট রয়েছে মোহরা ওয়ার্ডে, এ ওয়ার্ডে ৫২টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও শুলকবহর ওয়ার্ডে ৩০ স্পট, পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে ২৯টি ও দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ২৫ স্পটকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, জুন মাসে রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি মাসের পাঁচ দিনেই ২২৩ জন আক্রান্ত ও তিনজন মারা গেছেন। দিন দিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে ডেঙ্গু, এখনই যদি সঠিকভাবে মশার বিস্তার রোধ করা না হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস বলেন, এখন যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে এটি এডিস মশা জন্মানোর জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে যে কোনো পাত্রে পানি জমে যেতে পারে আর তাতেই জীবনঘাতী এডিস মশা জন্মাবে। আমাদের সচেতন হতে হবে। যেন প্রয়োজন ছাড়াও কোথাও পানি জমিয়ে না রাখি। পানি জমিয়ে রাখলেও তা যেন ঢেকে রাখা হয়। এ ছাড়াও নির্মাণাধীন ভবন, থানায় জব্দ করা পুরাতন গাড়ি, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পানি জমে থাকে। তাই এসব জায়গায় নজর দিতে হবে বেশি। এগুলো সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব হবে না, যদিওবা আমরা জনগণ সচেতন না হই। এদিকে মশক নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়রকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। উদ্বেগের কথা জানিয়ে পাশাপাশি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালককেও (সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ) ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়। চসিক মেয়রকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বর্ষা মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে করপোরেশন এলাকায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগী দ্রুত বাড়ছে। যা গত বছরের তুলনায় আশঙ্কাজনক। গত ৫ দিনে চট্টগ্রামে ১৯৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও মশক নিধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। এদিকে দুই সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করে। ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করার পর থেকে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে চসিকের ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। মশক নিধন ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও ভিন্নমত পোষণ করছে অনেকে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশা নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বরাদ্দ রেখেছে ৫ কোটি টাকা, যা বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের পাঁচ গুণ। গতবার মশা নিধনে ১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে চসিক। এর মধ্যে শুধু মশার ওষুধ কেনায় ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮০ লাখ টাকা।

সর্বশেষ খবর