শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সমস্যা জর্জরিত প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিষ্ঠান

ধারণক্ষমতার তিন গুণ বাসিন্দা, জনবলের অভাব

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের একমাত্র সরকারি ‘মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিষ্ঠান’টি ধুঁকছে নানা সংকটে। ধারণক্ষমতার তিন গুণ বাসিন্দা, জনবল সংকট, আর্থিক দীনতায় এখানে থাকা প্রতিবন্ধী শিশুদের সঠিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে ১৯৯৬-৯৯ সালে নগরীর রউফাবাদে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়। যার লক্ষ্য ছিল ৬-১৬ বছর বয়সী মৃদু প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন করা। এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে প্রতিবন্ধীরা যেন সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে। কিন্তু দুই যুগে প্রতিষ্ঠানটি ঠিকানাবিহীন মানসিক প্রতিবন্ধীদের আশ্রয় কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে ৬টি কক্ষে ২৫ বালক ও ২৫ বালিকার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ছিল। পরে এর ধারণক্ষমতা ৭৫ জনে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এখানে ১৯৬ জন মানসিক প্রতিবন্ধী রয়েছে; যা ধারণক্ষমতার তিন গুণ। এর মধ্যে বালিকা ৭৩ ও বালক ১১৯। ধারণক্ষমতার তিন গুণ বাসিন্দা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের দুটি হোস্টেল ভবনে তাদের থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে। এ প্রতিষ্ঠানটি মৃদু প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হলেও এখানে ১০-১২ জন বয়স্ক মানসিক ও শারীরিক পূর্ণ প্রতিবন্ধী রয়েছেন। কেউ কেউ শারীরিকভাবে পুরোপুরি প্যারালাইজড। যারা বিছানা থেকে নড়াচড়া করতেও অক্ষম। তারা শৌচাগার ব্যবহার, গোসল, হাত-মুখ ধোয়া, খাওয়াদাওয়া, জামাকাপড় পরিধান করতেও সক্ষম নন। এমনকি অনেকেই বিছানায় মলমূত্র ত্যাগ করেন। বছরের পর বছর এখানে থাকা অনেক মানসিক প্রতিবন্ধীর পরিবারের খোঁজও মিলছে না। প্রতিষ্ঠানটির বয়স দুই যুগ পার হলেও এখনো মেলেনি পূর্ণাঙ্গ জনবল। এর প্রাতিষ্ঠানিক জনবল ২৭ হওয়ার কথা। বর্তমানে এখানে কর্মরত আছেন ১১ জন। চারজন কর্মকর্তা থাকার কথা, আছে একজন। সাইকোথেরাপিস্টের একটি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি। এখন কোনো নার্স নেই। আয়া না থাকায় বিছানায় যারা মলমূত্র ত্যাগ করেন তাদের দেখাশোনা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। জনবল সংকটে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দুজন ঝাড়ুদার, দুজন নিরাপত্তা প্রহরী থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন পদগুলো শূন্য। একজন বার্তাবাহকের পদ উল্লেখ থাকলেও সেটি শূন্য। একান্ত প্রয়োজনে শিশুদের হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে বা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে হয়। একটিমাত্র পুরনো জরাজীর্ণ মাইক্রোবাসে যা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিশুদের অনেকেই জেদি স্বভাবের। দু-এক জন এমন আছে তারা যা চায় তাই দিতে হয়। রাতের খাবারে প্রত্যেক শিশুর জন্য এক টুকরো করে মাংস বরাদ্দ। কিন্তু অনেক শিশু এতটাই জেদি তাদের ১০ টুকরো মাংস দিতে হয়। অন্যথায় তারা খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়। দেশের নানা স্থান থেকে আদালতের আদেশে এখানে প্রতিবন্ধী শিশু আসা অব্যাহত আছে। নতুন হোস্টেল ভবন ও নিরাপত্তা প্রহরীর সংখ্যা বাড়ানো জরুরি।

মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ (উপপরিচালক) আবুল কাশেম বলেন, প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদফতর যেখানে যাওয়ার যাচ্ছি। নার্স নেই, আমরা স্ব উদ্যোগে ও ডোনারের মাধ্যমে ১২ জন আয়া রেখেছি। ডোনারের সহযোগিতাও এখন তেমন নেই। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি এখানকার প্রতিবন্ধী শিশুদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর