বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

পদ্মার পানি পরিশোধন করতে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

প্রতিদিন শোধন হবে ২০ কোটি লিটার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

মহানগরীর পানির চাহিদা মেটাতে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)। এখন প্রতিদিন ১ কোটি ৭৭ লাখ লিটার পানির ঘাটতি থাকে নগরীতে। এ ঘাটতি মেটাতেই একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন পদ্মা নদীর ২০ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করে বিশুদ্ধ করা সম্ভব হবে। পানযোগ্য এ পানি রাজশাহী মহানগরী এবং আশপাশের পৌর এলাকায় সরবরাহ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদ্মার পানি পরিশোধন করতে রাজশাহী শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সারেংপুরে স্থাপন হতে যাচ্ছে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। ওয়াসা জানায়, এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা। চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড কাজটি বাস্তবায়ন করবে। পদ্মায় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনে চীনা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০২১ সালের ২১ মার্চ চুক্তি করে রাজশাহী ওয়াসা। এ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমেই ২০৩৫ সালের মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে পানি সরবরাহ শতভাগ নিশ্চিত করা হবে বলে আশা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের। রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। আড়াই থেকে তিন শতাংশ সুদে হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২ হাজার ৩১৩ কোটির বেশি টাকা ব্যয় করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা চার বছর। গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সারেংপুরে পদ্মার যে স্থানে ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি স্থাপন করা হবে সেখানেই ভারত থেকে গঙ্গা নদী বাংলাদেশে ঢুকে পদ্মা হয়েছে। এখান থেকেই আবার পদ্মার শাখানদী হিসেবে বেরিয়ে গেছে মহানন্দা। দুই নদীর মোহনায় ওয়াসার এ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট হবে। সারা বছর এখানে অন্তত ৩০ ফুট গভীর পানি থাকে। প্রকল্প গ্রহণের আগে স্থানটির সারা বছরের পানির গভীরতা নিয়ে ৩০ বছরের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করেছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)। এর পরই সেখানে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী ওয়াসা।

রাজশাহী ওয়াসা জানায়, শহরে এখন প্রতিদিন পানির চাহিদা ১১ কোটি ৩২ লাখ লিটার। চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ ৮ কোটি ৬৫ লাখ লিটার পানি তোলা হয়। আর এখন মাত্র ৯০ লাখ লিটার ভূ-উপরিস্থ পানি পরিশোধন করা হয়। তা-ও প্রতিদিন ১ কোটি ৭৭ লাখ লিটার পানির ঘাটতি থেকে যায়। নতুন প্লান্ট হলে ঘাটতি থাকবে না। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে এ প্রকল্পের খসড়া সম্পন্ন করা হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হয়। পরে একই বছরের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রকল্পটি পাস হয়। এরপর নানা সমীক্ষা চলছিল। সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরই চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এখন কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।

রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকীর হোসেন বলেন, সারেংপুরে সারা বছর পদ্মায় পানি থাকে বলে জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থান নির্বাচনের আগে আইডব্লিউএম ৩০ বছরের পানির পরিসংখ্যান নিয়ে সমীক্ষাও চালিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শহরে আর পানির ঘাটতি থাকবে না। শহরের চাহিদা মিটিয়ে রাজশাহী ওয়াসা আশপাশের পৌর এলাকাগুলোয়ও সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর