রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

২০৪১ সালের মধ্যে ৮০ ভাগ জনসংখ্যা নগরে বাস করবে

বিআইপির গবেষণা প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হলেও অত্যন্ত দ্রুত হারে নগরায়ণ হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) অনুসারে, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশটির ৮০ ভাগ জনসংখ্যা নগরে বসবাস করবে। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, বাংলাদেশের এই দ্রুত নগরায়ণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে রাজধানীর ওপর। ড্যাপ অনুযায়ী, ঢাকার জনঘনত্ব একরপ্রতি ৩০০-৮০০ জন, যা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। এসব কারণ ঢাকাকে দুর্যোগ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে বিশাল বাধা হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।

গতকাল রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারে ‘নগর দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে করণীয় : প্রেক্ষিত ঢাকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। সভার যৌথ আয়োজক ছিল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম বাংলাদেশ।

এসব দুর্যোগ রোধে বিআইপি আটটি পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো হলো : সিটি করপোরেশনের প্রণয়ন করা ভূমিকম্প কনটিনজেন্সি প্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ (অস্থায়ী আশ্রয়গুলো যথাযথ চিহ্নিতকরণ এবং এ-বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধি); দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি, ২০১৯-এ বর্ণিত যেসব সংস্থার কনটিনজেন্সি প্ল্যান তৈরির কথা উল্লেখ রয়েছে তা অতিসত্বর প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করে জলাধারগুলো চিহ্নিত করা, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া; বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-২০৩৫)-এ বর্ণিত জলাধার ও উন্মুক্ত স্থানের শ্রেণি পরিবর্তন না করা এবং ওই সব জলাধার ও উন্মুক্ত স্থানের স্থানিক এলাকা নির্ধারিত করা; বিল্ডিং কোড প্রয়োগ সম্পর্কিত প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা; পর্যায়ক্রমে সব ধরনের পেশাজীবী নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা; ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন পারমিটিং সিস্টেম কার্যকর করা; কাঠামো নকশা, যন্ত্রকৌশল নকশা, বৈদ্যুতিক নকশা এবং প্লাম্বিং নকশা পরীক্ষা করা ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, দেশে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। যদিও বিশ্বে আরও কম ক্ষতি, সে তুলনায় আমাদের একটু বেশি। তিনি বলেন, ‘প্রবন্ধ উপস্থাপনায় দেখলাম রাজধানীর ৭৩ শতাংশ ভবন অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হয়েছে। একই সঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে ৮০ ভাগ জনসংখ্যা নগরে বসবাস করবে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

তবে ড্যাপসহ যেসব মহাপরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরও কঠোর হতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজউক শহরকে সঠিক উপায়ে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। ড্যাপের বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত জমিতে খোলা জায়গা বা পুকুর থাকলে সেটি বাঁচাতে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ ছাড়া তিনি উল্লেখ করেন সংশোধন ড্যাপে প্রস্তাব করা হয়েছে যে ৬ ফুট রাস্তা হলেই ভবন করা যাবে না, এ ক্ষেত্রে ভবন মালিককে ২০ ফুট রাস্তার জমি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে (সিটি করপোরেশন) প্রদান করার পরে ভবন তৈরির অনুমোদন দেওয়া হবে।

রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, আরবান রিজিলিয়ান্স প্রজেক্টে (ইউআরপি) ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। কীভাবে তা ড্যাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায় এর জন্য কর্মশালা চলমান রয়েছে এবং ওই মানচিত্র প্রকাশ করা হবে। এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ জমিতে ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনা করে ডিজাইন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ৭৩ শতাংশ ভবন অপরিকল্পিতভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে কী করা হবে সেজন্য কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ থেকে ৫০টি তৃতীয় পক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে, যারা ঢাকা মহানগরে ওই ভবনগুলো নির্ধারণের জন্য যাচাই করবে। এ ছাড়া যেসব ভবন নতুন করে নির্মাণ করা হবে সেগুলোয় রাজউক যাতে নিয়মিত মনিটর করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইপির সভাপতি ফজলে রেজা সুমন। সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের পরিচালক আবদুল্লাহ আল-মামুন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষ ছালেহ উদ্দিন, যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার এসএম মেহেদী হাসান, ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওয়াজ উদ্দিন, জাইকার সিনিয়র রিপ্রেজেনটেটিভ মারি মিউরা ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল। এ সময় ডেসকো, তিতাস ও সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর