মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

তুষের আগুন খুলনা বিএনপিতে

> নগরে ফের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ > ৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির ৩০ জনই অনুপস্থিত থাকছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনা নগর বিএনপিতে আবারও নেতৃত্বের বিরোধ দেখা দিয়েছে। ওয়ার্ড থানা পর্যায়ে কমিটি গঠনে কেন্দ্রের নির্দেশনা না মানা, সুবিধা নিয়ে বিতর্কিতদের দলে জায়গা দেওয়া ও কমিটি গঠনের সময় ভুয়া কাউন্সিলর তৈরির অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহিরসহ আহ্বায়ক কমিটির ৭১ সদস্যের অন্তত ৩০ জনই বিএনপি অফিসমুখী হচ্ছেন না। একইভাবে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীর মধ্যেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ ৪ আগস্ট দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে কর্মসূচি পালনকালে জেলা বিএনপি সদস্যসচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীর সঙ্গে জেলা যুবদলের সম্পাদক ইবাদুল হক রুবায়েদের অনুসারীদের বিবাদ তৈরি হয়। ৫ আগস্ট দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বৈঠকে দৌলতপুর থানা বিএনপির সভাপতি মুর্শিদ কামালকে অপদস্ত করা হয়।

এ ছাড়া ১৭ জুলাই সাবেক নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু তারুণ্যের সমাবেশে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মঞ্চের সামনে অবস্থান নিলে বর্তমান সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন মাইকে ঘোষণা দিয়ে ওই স্থানে যুবদল ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিতে বলেন। এক পর্যায়ে সেখানে হাতাহাতি হলে মঞ্জু অনুসারীদের কয়েকজন আহত হন। এসব ঘটনায় সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা যায়, ‘এক নেতার এক পদ’ কেন্দ্রের এই নির্দেশনা ভেঙে ২২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটিতে যুবদলের দুজন, স্বেচ্ছাসেবক দলের তিন, শ্রমিক দলের দুই ও মহিলা দলের চারজনকে সদস্য করা হয়েছে। একইভাবে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কমিটিতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল ও শ্রমিক দলের সাতজনকে রাখা হয়েছে। সদর থানা বিএনপির কমিটি গঠনকালে ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদুল হকের ছবি আইডি কার্ডে সংযুক্ত করে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভুয়া ভোটার (নম্বর ১৭২) করা হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নগর বিএনপির নির্বাহী সদস্য খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিককে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হয়। নোটিসের জবাব দেওয়ার পর থেকে তিনিও অফিসমুখী হচ্ছেন না। এ ছাড়া নির্দেশনা ভেঙে ১৭, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি আহ্বায়ক কমিটিকে যুবদলের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে নগর বিএনপি সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন নিজের অনুসারীদের বিভিন্ন থানা কমিটিতে জায়গা দিতে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিএনপির সদস্য পদ দিচ্ছেন। কমিটি গঠন ও দল পরিচালনায় তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে নগরের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা থাকার পরও ওয়ার্ড বা থানা পর্যায়ে কমিটিতে অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের স্থান দেওয়া হয়েছে।

ফলে এক নেতার দুই পদ তৈরি হয়েছে। কমিটি গঠনে আমার মতামত পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। মাদক ব্যবসায়ী, বিতর্কিত ব্যক্তিদের জায়গা দিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ায় আহ্বায়ক কমিটির অন্তত ৩০ জন দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। তবে আমরা সবাই রাজপথে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। নগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক প্রায়ই অসুস্থতা ও ব্যবসায়িক কারণে বাইরে থাকায় মাঝে মধ্যে কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকেন। দলীয় কার্যালয়ে না আসার বিষয়টি সঠিক নয়। এ ছাড়া অঙ্গ সংগঠনে যারা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার সময় তাদের বাদ দেওয়া হবে।

জানা যায়, নগর বিএনপিতে নেতৃত্বের বিরোধ পুরনো। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর নগর বিএনপির শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। সেই থেকে নগরে সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও সাবেক নগর কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠুর অনুসারীরা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। মাঝে মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজপথে দেখা মেলে মঞ্জু অনুসারীদের।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর