বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতার রেকর্ড দেখল চট্টগ্রাম

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

জলাবদ্ধতার রেকর্ড দেখল চট্টগ্রাম

জলাবদ্ধতার চরম নাভিশ্বাস কোনোমতেই কমছে না। এবার জলাবদ্ধতার নতুন রেকর্ড দেখল চট্টগ্রামবাসী। অথচ গত ১০ বছরেও নতুন খাল খনন করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কাপোরেশন। এদিকে চসিককে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান দাবি করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেছেন, তাদের অযোগ্যতায় সরকার জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ সিডিএকে দিয়েছে। 

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সালে প্রণীত মহাপরিকল্পনায় তিনটি নতুন খাল খননের সুপারিশ করে। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) একটি নতুন খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৪ সালের ২৪ জুন একনেক সভায় খালের জন্য ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দের পর প্রায় ১০টি বছর পার হয়ে গেল। অথচ খাল খনন এখনো ভূমি অধিগ্রহণ পর্যায়ে। নগরবাসীর অভিযোগ, ১০ বছরে একটি খাল খনন করতে না পেরে চসিক নিজেকে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিয়েছে। যার খেসারত নগরবাসীকে প্রতি বর্ষা মৌসুমেই দিতে হচ্ছে। এ বছর নগরবাসী দেখলেন জলাবদ্ধতার নতুন ভয়ানক রূপ। এটি চসিক পরিচালনার ব্যর্থতার ফল। ২০১৪ সালে খাল খনন প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকা, মেয়াদকাল ছিল ২০১৭ সালের জুন। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল আবারও প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। দুই দফা সংশোধনের এখন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন। বর্তমানে প্রকল্পের ভৌতিক অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল হুদা বলেন, প্রকল্পটি এখন ভূমি অধিগ্রহণ পর্যায়ে। বর্তমানে তিন ভাগের দুই ভাগ পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই খনন কাজ শুরু করা হবে। প্রকল্পের জন্য ২৫ দশমিক ২৩৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। পাঁচটি এলএ মামলার মাধ্যমে অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে জমির মৌজা মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যায়। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বহদ্দারহাট বারইপাড়া-চাক্তাই খাল-শাহ্ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক-নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া-পূর্ব বাকলিয়া-বলির হাট হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে খালটি। খালের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৬৫ ফুট। প্রকল্পের আওতায় খালের দুই পাশে ২০ ফুট করে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি সড়ক ও ৬ ফুট প্রস্থের দুটি করে ওয়াকওয়ে হবে। সাড়ে ৫ হাজার মিটার রিটেইনিং ওয়াল, ৯টি আরসিসি ব্রিজ, ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮১ ঘন মিটার মাটি উত্তোলন এবং সাড়ে ৫ হাজার মিটার ড্রেন নির্মাণ করার কথা।

সিডিএ বলল চসিক ‘অযোগ্য’ 

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বললেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) অযোগ্য প্রতিষ্ঠান। তাই সরকার জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ চসিককে না দিয়ে সিডিএকে দিয়েছে। গতকাল দুপুরে সিডিএর সম্মেলনে কক্ষে জলাবদ্ধতা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এর আগে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ‘জলাবদ্ধতার জন্য সিডিএ দায়ী’ বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ মেয়রের বক্তব্য মিথ্যা দাবি করে বলেন, সিডিএ জলাবদ্ধতার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, বাকি সব কাজ চসিকের। সবাই মনে করেছেন সব দায় সিডিএর। মূলত চসিক জলাবদ্ধতার কাজ করতে না পারায় সিডিএকে মেগা প্রকল্প দেওয়া হয়। মেয়র সাহেব ভুল তথ্য দিয়ে সিডিএকে দোষারোপ করছেন। ‘সিডিএ বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের যোগ্য না’ চসিক মেয়রের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সিডিএর বক্তব্য জানতে চাইলে দোভাষ বলেন, সিডিএ যোগ্য না হলে সরকার কেন প্রকল্প দিয়েছে। বরং তারা যোগ্য নয় বলে তৎকালীন সময়ে সিডিএকে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর