শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্যার ধাক্কা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে

ক্ষতিগ্রস্ত নতুন লাইন, নির্মাণ কাজ বন্ধ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বন্যার ধাক্কা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের ৪০০ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত, সরে গেছে মাটি ও পাথর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রবল বন্যায় সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের প্রায় ৪০০ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রেললাইন থেকে সরে যায় মাটি ও পাথর। লাইনের নিচ দিয়ে হয়ে যায় নালা। ফলে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্পে বড় ধাক্কা লেগেছে বন্যার। এতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজও বন্ধ রয়েছে। তবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষামূলক রেল চলাচল নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। গত জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৮ শতাংশ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রেললাইনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কালভার্ট না থাকায় পানি চলাচল করতে পারেনি। ফলে, এক পাশে জমে থাকা পানির তোড়ে রেললাইনের মাটি সরে যায়। গত ৪ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রবল বর্ষণ, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় পাঁচটি উপজেলা। এর মধ্যে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় পানির বিস্তৃতি ছিল অনেক বেশি। এ সময় বন্যায় তিন উপজেলা তলিয়ে যায়। এ তিন উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্বপাশের এলাকা দিয়ে নির্মিত হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেললাইন।

বন্যায় কক্সবাজার রেললাইনের পটিয়ার শ্রীমতি খালের রেল সেতুটি পাহাড়ি ঢলে ভেঙে যায়। তাছাড়া রেললাইন ঘেঁষে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, চকরিয়ায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট, চাষের জমিসহ বড় একটি এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়।

কক্সবাজার-দোহাজারী রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বলেন, রেললাইনের দোহাজারী-সাতকানিয়া এলাকার প্রায় ৪০০ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া অনেক জায়গায় মাটি ও পাথর সরে লাইনের নিচে নালার মতো হয়ে গেছে। পানি কমলে এগুলো মেরামত করা হবে। তিনি বলেন, বান্দরবান এলাকা থেকে অতিরিক্ত পাহাড়ি ঢল নেমেছিল। তাই এমন বন্যা হয়। এমন পানি অতীতে কমই দেখা গেছে।

এত কম সময়ে এত বেশি পানি জমবে, তা কেউ কল্পনাও করেনি। তবে বন্যার কারণে রেললাইন উদ্বোধনে কোনো সমস্যা হবে না। নতুন রেললাইনের কারণে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কার্যত পানি প্রবাহের তুলনায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি অনেক বেশি ছিল, তাই এমন পানি জমেছে। কিন্তু এমন নয় যে, রেললাইনের পশ্চিম অংশে পানি নেই, কিন্তু পূর্ব অংশে আছে। এখানে প্রয়োজনীয় কালভার্ট রেখেই লাইন তৈরি করা হয়েছে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া বলেন, পাহাড়ি ঢল, অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে এ এলাকা প্লাবিত হয়। পানি প্রবাহিত হওয়ার জায়গা থেকে পানির পরিমাণ বেশি ছিল বলে এমনটি হয়েছে।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত মহাসড়কে আটটি কালভার্ট আছে। কিন্তু সড়কের অনতি দূরে নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে কালভার্ট আছে মাত্র তিনটি। ফলে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় বলে দাবি স্থানীয়দের।

সাতকানিয়ার বাসিন্দা আহমেদ মোস্তাক বলেন, সড়কের চেয়ে রেললাইনে কালভার্টের সংখ্যা কম। তাই পূর্ব দিকের পানি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হতে পারেনি। ফলে পানি বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে লোহাগাড়ার আধুনগরে পর্যন্ত।

‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ শীর্ষক ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে ১০০ কিলোমিটার রেললাইনে ১৪৫টি মাইনর কালভার্ট ও ৩৯টি মেজর ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে এখনো ১২ কিলোমিটার রেলপথ ট্র্যাক বসানো হয়নি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর