শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে খরস্রোতা হিসনা নদী

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

অস্তিত্ব সংকটে খরস্রোতা হিসনা নদী

প্রভাবশালীদের দখলে এক সময়ের খরস্রোতা হিসনা নদী এখন চরম অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। নদীর পাড় দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাটসহ বহুতল ভবন। আবার কোথাও বাঁধ দিয়ে নদীতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। অনেকে নদীর বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন। দখলের কারণে নদীর গতিপথ দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে একসময়ের খরস্রোতা হিসনা নদী এখন তার চিরচেনা যৌবন হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এতে পরিবেশসহ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হিসনা নদী। পদ্মা থেকে উৎপত্তি হিসনা নদী দৌলতপুর উপজেলা হয়ে ভেড়ামারার বুক দিয়ে বয়ে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ কিলোমিটার।

এক সময় যে নদী দিয়ে চলত পালতোলা নৌকাসহ বড় মালবাহী কার্গো জাহাজ। সে নদী এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। জাহাজ চলা তো দূরের কথা, এখন নদীর বেশির ভাগ জায়গাতেই পা ভেজানোর পানিও নেই। নদীর ভিতরেই চলছে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ। প্রভাবশালীরা নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন দোকানপাটসহ বহুতল ভবন। বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দিয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে নদীর গতিপথও। ফলে এক সময়ের খরস্রোতা হিসনা নদী তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। পানির প্রবাহ না থাকায় এখন দেখে আর বোঝার উপায় নেই একসময় বড় বড় নৌকা ও কার্গো জাহাজ চলত এ নদীতে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় মাছ চাষের জন্য লিজ নিয়ে বাঁধ তৈরির মাধ্যমে নদী দখল করে নদীটিকে পুকুরে পরিণত করা হয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ ম ল জানান, আমরা দেখেছি এক সময় হিসনা নদী ছিল খুবই প্রাণবন্ত। নদীতে নিয়মিত নৌকা চলত। নৌকাযোগে লোকজন চলাচল করত। কিন্তু মাছ চাষের নামে লিজ নিয়ে নদী দখল হয়ে গেছে। দখলদাররা বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে নদীতে মাছ চাষ করছে। সরেজমিন ভেড়ামারা অংশে নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, হিসনা ব্রিজ থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত নদীর পাড়ের কিছু বসবাসকারী পরিবার ও প্রতিষ্ঠান নদীর পড়ে গাইড ওয়াল দিয়ে মাটি-বালু ভরাট করে সুউচ্চ ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। কাঠেরপুলের জামাল হোসেন নামের একজন ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা বলেন, পালতোলা বড় বড় পণ্যবাহী নৌকা চলতে দেখেছি। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীটির অনেক স্থানই প্রভাবশালীরা দখল করে চাষাবাদসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন এটি সত্যি। তবে দখলদারের প্রকৃত সংখ্যা কত তা বলা মুশকিল।

পাউবোর পক্ষ থেকে নদীটি সার্ভে করে দখলদারের নাম-পরিচয়সহ প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে তালিকা প্রস্তুতের কাজে হাত দিয়েছি। এটির কাজ এখনো চলমান আছে। তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর বলা যাবে দখলদারের প্রকৃত সংখ্যা কত। তিনি আরও জানান, তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান শুরু হবে। এক সময়ের খরস্রোতা হিসনা নদী দিন দিন প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা। পরিবেশকর্মী খলিলুর রহমান মজু বলেন, এভাবে দিনের পর দিন প্রভাবশালীরা নদীটিকে এভাবে গিলে খাবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি হচ্ছে- মৃতপ্রায় নদীটিকে অবিলম্বে দখলমুক্ত করে দ্রুত পুনর্খননের উদ্যোগ নেওয়া হোক। নদীটি দখলমুক্ত হলে জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি সেচ সুবিধাসহ মানুষ নদীর জল ব্যবহারের সুযোগ পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর