শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
বরিশালে রাস্তাঘাটের হাল

বেহাল সড়কে দুর্ভোগ চরমে

সংস্কারের সামর্থ্য নেই সিটি করপোরেশনের, আগে ড্রেনেজ, পরে সড়ক সংস্কারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

রাহাত খান, বরিশাল

বেহাল সড়কে দুর্ভোগ চরমে

ভারী বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে বরিশাল নগরীর কালু শাহ এবং বেলতলা সড়কের দুরবস্থা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরিশাল নগরীর প্রধান কয়েকটি সড়ক বাদে শাখা এবং অলিগলির সড়ক আগে থেকেই ছিল বেহাল। সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি আর কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে সড়কগুলো আরও বেহাল হয়ে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ভালো সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানেও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে নিরাপদ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এদিকে দ্রুত এসব সড়ক সংস্কারের সাধ্য নেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের। ১০৭ কিলোমিটার বিটুমিনাস সড়কসহ মোট ক্ষতিগ্রস্ত ১৬৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চাহিদাপত্র পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন বিসিসির কর্মকর্তারা।

আগস্টের প্রথম তিন দিন কীর্তনখোলা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নগরীর ২ হাজার ৫৬টি সড়ক, শাখা সড়ক, লেন ও অলিগলির বেশির ভাগ তালিয়ে যায়। জোয়ারের পানি না নামতেই ৪ থেকে ৭ আগস্ট টানা চার দিন ৪০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিতে আরও পানি জমে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় নগরীতে। নদীর পানির স্তর বিপৎসীমার নিচে নেমে যাওয়ার নয় দিন পরও জলাবদ্ধ ছিল সড়কগুলো। ধীরে ধীরে পানি নেমে গেলে বেরিয়ে আসে সড়কের ক্ষত। এজন্য প্রবহমান খালগুলো অবৈধ দখল-দূষণ-ভরাট করে ড্রেন নির্মাণ এবং মোট ১৬১ কিলোমিটার ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না রাখাকে দায়ী করেছেন নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু। জানা যায়, সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি আর ভারী বৃষ্টিতে টানা কয়েক দিন তলিয়ে থাকায় বিসিসির ভালো সড়কের তালিকায় থাকা বগুড়া রোডের বিভিন্ন স্থানেও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দ সৃষ্টিসহ চৌমাথা-বটতলা সড়ক নাজুক হয়েছে। ভারী যানবাহন চললে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে সড়কে। আগে থেকে সংস্কারবিহীন কালুশাহ সড়ক, পলাশপুর কাজীর গোরস্থান থেকে বেলতলা খেয়াঘাট সড়ক, কাশীপুর চৌমাথা থেকে আবেদ আলী শাহ মাজার সড়ক, রেন্ট্রিতলা-সোলনা সড়ক, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণচূড়া সড়ক, নমঃশূদ্রপাড়া সড়ক, হরিণাফুলিয়া সড়কসহ শাখা ও অলিগলির বহু সড়ক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। নগরীর বাসিন্দা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, নগরীর প্রধান কয়েকটি সড়ক বাদে অন্য বেশিরভাগ সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার হয় না। এসব সড়ক আগে থেকেই বেহাল। সাম্প্রতিক জোয়ারের পানি আর বৃষ্টিতে সড়কগুলোর দুরবস্থা আরও বেড়েছে। এতে জনসাধারণের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অন্যদিকে জোয়ারের পানি আর বৃষ্টিতে ভালো বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়কগুলোর টেম্পার নস্ট হয়ে গেছে। ওই সড়কে ভারী যানবাহন চললে উঠে যাচ্ছে বিটুমিনের আস্তর। সৃষ্টি হচ্ছে খানাখন্দের। এতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাশার জানান, সাম্প্রতিক জোয়ারের পানি আর বৃষ্টির পানি জমে থেকে নগরীর অন্তত ৩০ ভাগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নগরীর মোট ৫৫৮ কিলোমিটার বিটুমিনাস কার্পেটিং, আরসিসি, সিসি, হেরিংবন ও মাটির সড়কের মধ্যে ১৬৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭৫ কিলোমিটার বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়কের ১০৭ কিলোমিটার সড়কের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার ও মেরামতের জন্য অন্তত ২০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার ও মেরামতের আর্থিক সংগতি এ মুহূর্তে সিটি করপোরেশনের নেই। বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিলে সড়ক সংস্কার করা হবে। বিসিসির অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. তারিকুল হক বলেন, খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে পুনঃখনন ও ড্রেনেজব্যবস্থার সংস্কার না করে সড়ক সংস্কার করলে প্রতি বছর বর্ষায় একই পরিণতি হবে। আবার সড়ক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। আগে ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নয়ন করে পরে সড়ক সংস্কারের পরামর্শ দেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর