সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেটে পাথর আমদানি বন্ধ

♦ মৌখিক নির্দেশে শুল্ক বৃদ্ধি ♦ ব্যবসায়ীদের আন্দোলনে কমছে রাজস্ব আদায় ♦ কর্মহীন হাজার হাজার শ্রমিক

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

কাস্টমস ডিউটি ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে সিলেটের সবকটি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো ধরনের পরিপত্র জারি ছাড়া মৌখিকভাবে শুল্ক বৃদ্ধি অনিয়মতান্ত্রিক বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা। তাদের অভিযোগ, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে প্রতি ট্রাকে তাদের ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা বাড়তি পরিশোধ করতে হবে। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তারা। বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে ১৬ আগস্ট থেকে ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আমদানি বন্ধ থাকায় লোড-আনলোডের কাজে নিয়োজিত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। রাজস্ব আদায় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আমদানিকারকরা জানান, এমনিতেই পাথর ও চুনাপাথর ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। এর মধ্যে কাস্টমসের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে টনপ্রতি ২ ডলার করে ডিউটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতি টন চুনাপাথরের ডিউটি (ইম্পোর্ট অ্যাসেসমেন্ট রেট) সাড়ে ১১ ডলার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১৩ ডলার এবং বোল্ডার পাথরের রেট ১১ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৩ ডলার করা হয়। এ ছাড়া বাড়ানো হয়েছে আমদানি শুল্কও। শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৬ আগস্ট থেকে ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ করে দিলে কাস্টমস কর্মকর্তারা ২ ডলারের পরিবর্তে ১ ডলার করে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু আগের নির্ধারিত হারে শুল্কারোপের দাবিতে ব্যবসায়ীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এদিকে, আমদানি বন্ধ থাকায় পাথর লোড, আনলোড ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। শুল্ক স্টেশনগুলোতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার করে আমদানি চালু করার দাবিতে কয়েকদিন ধরে তারা বিক্ষোভ করে আসছেন।  তামাবিল স্থলবন্দরের শ্রমিক আবুল কালাম জানান, পাথর, চুনাপাথর লোড-আনলোডের কাজ করে তিনি পাঁচ সদস্যের পরিবার চালান। কিন্তু চার দিন ধরে আমদানি বন্ধ থাকায় ঘরে বাজার নিতে পারছেন না। বৃদ্ধ মায়ের ওষুধও কিনতে পারেননি। বেকার হওয়া হাজার হাজার শ্রমিকের পরিবারের দিকে তাকিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করে আমদানি চালুর দাবি জানান তিনি। তামাবিল চুনাপাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সহসভাপতি জালাল উদ্দিন জানান, বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হলে আমদানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই বাধ্য হয়ে তারা আমদানি বন্ধ রেখেছেন। এতে ব্যবসায়ী ও সরকার উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই উভয়পক্ষের স্বার্থে বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. লিয়াকত আলী জানান, কোনো ধরনের পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপন ছাড়া এনবিআরের এমন সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। আমদানি বন্ধ থাকায় সীমান্তের ওপারে আটকা পড়েছে পাথরবাহী হাজারও ট্রাক। এতে সরকারও প্রতিদিন অন্তত ৫ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। সিলেট কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার সোলাইমান হোসেন জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনার আলোকেই মূলত অ্যাসেসম্যান্ট ভ্যালু বাড়ানো হয়েছে। বোল্ডার পাথরের ডিউটি ১২ ডলার ও চুনাপাথরের ডিউটি সাড়ে ১২ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের আলোচনার সুযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, সিলেট বিভাগে সবমিলিয়ে ১৩টি শুল্ক স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে জৈন্তাপুরের তামাবিল, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, সুনামগঞ্জের বাগলি, বড়ছড়া ও চারাগাঁও এবং ছাতকের ইছামতি ও চেলা স্টেশন দিয়ে মূলত চুনাপাথর ও বোল্ডার পাথর আমদানি হয়।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর