শিরোনাম
সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাবির হলে থেকেই প্রক্সি নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়ের

রায়হান ইসলাম, রাবি

প্রক্সি প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও চাকরি পরীক্ষায় চান্স পাইয়ে দেওয়ায় কাজ করছে একটি জালিয়াত চক্র। দীর্ঘদিন ধরে চক্রটির সন্ধান করছে পুলিশ। এ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষার সময় এ চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্তকে গ্রেফতার করা হয়। এবার আরেক সদস্যের খোঁজ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকেই তিনি এসব কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। তবে হল প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ ড. রুহুল আমিন বলেন, তন্ময় হলের বৈধ কোনো ছাত্র নন। তাকে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে। তবু হলে থাকেন। তবে হলে অবৈধভাবে অবস্থানকারী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাজ চলছে। জানা গেছে, ১৮ আগস্ট জালিয়াতি ও অপহরণের অভিযোগে তন্ময়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি মামলার প্রতিবাদে রাবির শাহ মখদুম হলের সামনে সংবাদ সম্মেলনে করেন এবং পরদিন দুপুর পর্যন্ত হলেই অবস্থান করেন। হলে থেকেই শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত তিনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ফোকলোর বিভাগ থেকে অনেক আগেই তার পড়াশোনা শেষ হয়েছে। ১৯ আগস্ট জালিয়াতি মামলায় অভিযুক্ত থাকায় তাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

অভিযোগ আছে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত এই ছাত্রলীগ নেতা। চক্রবদ্ধভাবে প্রক্সি জালিয়াতি করে শিক্ষার্থীদের কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ করে দেন তারা। বিনিময়ে এসব শিক্ষার্থীর সঙ্গে করেন লাখ লাখ টাকা চুক্তি। এমন অভিযোগে তন্ময়ের বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার থানায় চারটি এবং বোয়ালিয়া ও চন্দ্রিমা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এতে তিন মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, তন্ময়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতির একাধিক মামলা হয়েছে। তিনি এখন পলাতক। এসব মামলার সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাবিতে আহসান হাবীব নামের এক শিক্ষার্থীকে প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি করতে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা চুক্তি করেন ছাত্রলীগ কর্মী প্রাঙ্গণ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ওই শিক্ষার্থী চুক্তির টাকা পরিশোধ না করায় তাকে ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ করে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন প্রাঙ্গণ ও তন্ময়। এদের সঙ্গে শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগ নেতা রাজু ও কর্মী সনেট ছিলেন বলে জানিয়েছেন আহসান। এ ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় তাদের নামে দুটি মামলা হয়েছে। জালিয়াতির অভিযোগে সনেটের নামেও নগরীর বিভিন্ন থানায় কয়েকটি মামলা হয়েছে।

অভিযোগ আছে, তন্ময়ের সঙ্গে চক্রবদ্ধভাবে কাজ করেন সনেট। এ ছাড়া রাজুর নামে অপহরণ ছাড়াও মাদকের মামলা রয়েছে। এদিকে মার্চে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় তন্ময় ও সনেটের নামে ভর্তি জালিয়াতির মামলা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির করে শিক্ষার্থী ভর্তির চুক্তিতে ২০-২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার কথা মামলায় উল্লেখ আছে। এ ছাড়া এ বছর রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন স্বপন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, তন্ময়ের নির্দেশে অর্থের বিনিময়ে এ জালিয়াতিতে যুক্ত হয়েছেন তিনি। গত বছর রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সিকান্ডে আটক ফোকলোর বিভাগের সাবেক ছাত্র বায়েজিদ প্রথম তন্ময়ের নাম সামনে আনেন। এ জালিয়াতির মূল হোতা তন্ময় বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন এই শিক্ষার্থী। তখন রাবি অগ্রণী ব্যাংক শাখায় তন্ময়ের নামে ৪২ লাখ টাকা লেনদেনের সন্ধান পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে রাবি ও রুয়েট ক্যাম্পাস ঘিরে মাদক কারবারির তালিকায় ১৭ নম্বরে ছিলেন তন্ময়।

১৮ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেন ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। সামনে শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিত রাখতেই এ ষড়যন্ত্র করছেন শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।’ তবে তন্ময়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন শাখার সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করেছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও আছে। তদন্তসাপেক্ষে গিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর