সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পথহারা চট্টগ্রাম জাপা

নেতার অভাব না থাকলেও নেই সাংগঠনিক কার্যক্রম হতাশ কর্মীরা

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

পথহারা চট্টগ্রাম জাপা

চট্টগ্রামে সাংগঠনিকভাবে দিন দিন বিলীনের পথে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কেন্দ্রে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা চট্টগ্রামের হলেও দলটির অবস্থান চট্টগ্রামে শোচনীয়। তবে নির্বাচন এলে দলটির নেতাদের আসনভিত্তিক কিছুটা সক্রিয় দেখা যায়। এমন অবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে কৌতূহলী জাপার সমর্থকরা। যদি এককভাবে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করে, চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী সংকট না হলেও কর্মী সংকটে ভুগবে জাতীয় পার্টি- এমন ধারণা রাজনৈতিক সচেতন মানুষের। জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ জা ম অলিউল্লাহ মাসুদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচন ঘিরে আমাদের চেয়ারম্যান কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলকে সংগঠিত করছি এবং কমিটি পুনর্গঠন কার্যক্রম চালাচ্ছি। চেয়ারম্যান কর্মিবান্ধব নেতা। তিনি সব সময় দলকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রামে ১৬ আসনে আমাদের প্রার্থী রয়েছে। তারা এখন থেকে কাজ করছেন।’ নির্বাচনে কর্মী সংকট হবে না বলেও মনে করেন তিনি। জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টির একটিমাত্র আসনে প্রতিনিধিত্ব করছে দলটি। সেটি হলো চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী আসন। এ আসনে দলটির নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী মহাজোটের সমর্থনে এমপি হয়েছেন। তবে বিগত সময়ে এককভাবে দলটির কোনো প্রার্থী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হতে পারেননি। এর আগে হাটহাজারী থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে এমপি হন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী। ওই নির্বাচনে নগরীর ডবলমুরিং আসনে জাপার প্রার্থী মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম আওয়ামী লীগের ডা. আফসারুল আমীনের কাছে পরাজিত হন। এর আগে ব্যারিস্টার আনিস ১৯৯৬ সালে জাপা থেকে একক প্রার্থী হিসেবে হাটহাজারীতে নির্বাচন করে জামানত হারান। দলটির নেতারা জানান, এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের পর সাংগঠনিক দুরবস্থার কারণে চট্টগ্রাম থেকে এককভাবে নির্বাচন করে একটি আসনও পায়নি দলটি। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই প্রার্থীর ছড়াছড়ি থাকে দলটিতে। নগর জাপা নেতা সোলায়মান আলম শেঠ খাগড়াছড়ি আসন থেকে নির্বাচন করেছেন বিগত সময়ে। তবে নানা সময়ে নগরের নানা আসন ও চসিক নির্বাচনে প্রার্থিতা জানান দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকেন না তিনি। একক কর্তৃত্বে জাপা চালানোর কারণে অনেক নেতা দল থেকে দূরে আছেন বলে অভিযোগ একটি অংশের। জানা যায়, নগর জাতীয় পার্টির বর্তমান সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ ও সাধারণ সম্পাদক এয়াকুব হোসেন। ২০০৮ সাল থেকে সভাপতি পদে আছেন সোলায়মান শেঠ। নগরীর চকবাজারে নিজ বাড়ির সামনে তার ব্যবসায়িক অফিসকে জাতীয় পার্টির অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন তিনি। তার সঙ্গে বিরোধ রয়েছে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মাহজাবীন মোরশেদ ও মোরশেদ মুরাদ ইবরাহিমের। বর্তমানে এ দম্পতি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও সোলায়মান শেঠের কোনো কার্যক্রম নেই। বিগত এক দশকে বড় কোনো সমাবেশ করতে পারেনি বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। নগরীর থানা পর্যায়ে যে কমিটি আছে তাও দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ। একই অবস্থা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টিতে। একসময় পটিয়া ও সাতকানিয়ায় জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থান থাকলেও সে চিত্র এখন নেই। বর্তমানে প্রায় সব উপজেলায় দুটি করে কমিটি রয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে বহাল আছে। দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নুরুচ্ছফা সরকার ও সদস্য সচিব আবদুস সাত্তার রনি এখন জেলা জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির অবস্থাও নাজুক। জেলা জাপার সভাপতি সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম চৌধুরী। জেলার হাটহাজারী আসনে দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী এমপি হিসেবে টানা তিন মেয়াদে দায়িত্বে থাকলেও নিজ আসনে শক্তিশালী অবস্থান নেই জাতীয় পার্টির। এ ছাড়া রাউজানে বাড়ি হলেও শক্ত অবস্থান ছিল না প্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দীন আহমদ বাবলু ও প্রয়াত এমপি অধ্যাপিকা মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীর।

জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন চট্টগ্রাম-১ আসনে শায়েস্তা খান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-২ আসনে নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৩ আসনে আবদুস সালাম, চট্টগ্রাম-৪ আসনে দিদারুল কবির দিদার, চট্টগ্রাম-৫ আসনে বর্তমান এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৬ আসনে ব্যারিস্টার সানজিদ রশিদ চৌধুরী, শফিকুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ আসনে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৮ আসনে জাতীয় পার্টির এয়াকুব হোসেন, আমান উল্লা আমান, চট্টগ্রাম-৯ আসনে সোলায়মান আলম শেঠ, ব্যারিস্টার সানজিদ রশিদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনে ওসমান খান, চট্টগ্রাম-১১ আসনে আবু তাহের, চট্টগ্রাম-১২ আসনে সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নুরুচ্ছাফা সরকার, চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সুজন দে, আবদুর রব চৌধুরী টিপু, আবদুস সাত্তার রনি, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে জাতীয় পার্টির আ জা ম অলিউল্লাহ চৌধুরী মাসুদ, সোনা মিয়া ও এ কে এম বাদশা মিয়া, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আবু ছালেম ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে সাবেক সিটি মেয়র ও সাবেক এমপি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর নাম প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন।

 

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর