মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাসের হারে বারবার পিছিয়ে সিলেট

ইউরোপ-আমেরিকা যেতে ঝোঁক, অনীহা পড়ালেখায় -শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান

আকতারুজ্জামান

দেশের শিক্ষাবোর্ডগুলোর মধ্যে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে বরাবরই পিছিয়ে রয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এসএসসি ও সমমানের গত ছয় বছরের ফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি উভয় দিক থেকেও পিছিয়ে আছে এ বোর্ডের ছাত্র-ছাত্রীরা। আর এই শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন, এ বিভাগের অধীন শিক্ষার্থীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বেশি। তারা যে কোনোভাবে পাস করেই বিদেশে পাড়ি জমাতে চায়। ইউরোপ-আমেরিকা যেতেই ঝোঁক এই তরুণদের, অনীহা রয়েছে পড়ালেখায়। চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয় গত জুলাইয়ে। ফলাফলে দেখা গেছে, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সব থেকে পিছিয়ে আছে সিলেট শিক্ষাবোর্ড। ২০২৩ সালে এ বোর্ডে ৭৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ২০২২ সালের এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে এই বোর্ড থেকে ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছে, যা সব বোর্ড থেকে পিছিয়ে। ২০২০ সালে সিলেট বোর্ডে পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী, যা সাধারণ সব শিক্ষা বোর্ডের থেকে কম। ২০১৯ সালে এই শিক্ষাবোর্ড থেকে এসএসসিতে পাস করেছে ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী। ওই বছরে সর্বনিম্ন পাসের রেকর্ডও সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকেই। ফলাফলে একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে ২০১৮ সালের এসএসসির ফলাফলেও। দেখা গেছে, ওই বছরে সব থেকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হারও সর্বনিম্ন রেকর্ড সিলেট শিক্ষাবোর্ডের। তবে ফলাফলে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে শুধু ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে। তথ্যমতে, করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বাতিল করা হয় বেশির ভাগ বিষয়ের পরীক্ষা। মাত্র তিনটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পরীক্ষায় অংশ নেয় ছাত্র-ছাত্রীরা। অতি সংক্ষিপ্ত এই পরীক্ষায় ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী পাস করে সিলেট বিভাগের, যা কয়েক শিক্ষা বোর্ডের থেকে এগিয়ে। ফল অনুসন্ধানে দেখা গেছে- শুধু পাসের হারেই না, জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হারেও পিছিয়ে আছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড।

 চলতি বছর যেখানে যশোর শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী, সেখানে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার ছিল ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ ছাড়া ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ দশমিক ১২ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডের ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডের ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ড ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। শুধু জিপিএ-৫ নয় জিপিএ ৪ থেকে ৪ দশমিক ৯৯ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও শিক্ষাবোর্ডগুলোর মধ্যে চলতি বছরে সব থেকে পিছিয়ে আছে সিলেট শিক্ষাবোর্ড।

সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রমা বিজয় সরকার গতকাল এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদককে বলেন, একটা সময় ছিল যখন সিলেট অঞ্চলে পড়ালেখা বা পাসের হার ছিল খুবই ভালো। কিন্তু সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা চেতনায়ও পরিবর্তন এসেছে শিক্ষার্থীদের। এই অঞ্চলের মানুষের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করে কোনোভাবে পাস করেই বিদেশে চলে যাব। অথচ দেশের অন্য বিভাগে বা অন্য শিক্ষাবোর্ডের অধীন জেলাগুলোয় আর্থিক সংকট থাকলেও তরুণদের পড়ালেখার প্রতি অনেক ঝোঁক থাকে। আর সিলেটে আর্থিক অবস্থা খুব ভালো হলেও তাদের পড়ালেখার প্রতি প্রবণতা কম দেখা যায়।

হাওরাঞ্চল হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাসের হারে প্রভাব পড়ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, সিলেটে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এখন অনেক উন্নয়ন হয়েছে। হাওর থাকার কারণে পড়ালেখায় নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়ছে না। বিদেশমুখিতাই বড় কারণ। তাদের ঝোঁক এখন ইউরোপ-আমেরিকা যেতে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর