মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফেনী নদীতে মিলছে না ইলিশ!

বাড়ছে মাছের দাম বাড়ছে জেলেদের ঋণ

ফেনী প্রতিনিধি

ঋণের টাকায় ট্রলার ভাড়া করে নদীতে মাছ ধরতে যান জেলেরা। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। কারণ ফেনী নদীতে মিলছে না ইলিশ। প্রতিদিন ৪০-৫০টি নৌকা নিয়ে জেলেরা ফেনী নদী হয়ে মোহনায় গিয়ে জাল ফেলেও পাচ্ছেন না কাক্সিক্ষত ইলিশ। ঘাটে ফিরে জেলেরা জানান, নৌকাপ্রতি তারা গড়ে ১০ থেকে ১৫টি ইলিশ পাচ্ছেন। তাদের জালে ধরা পড়া বেশির ভাগ ইলিশের ওজন প্রায় ১ কেজির বেশি। ফলে খরচ তুলতে গেলে তাদের ধরা ইলিশ প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৭০০ থেকে হাজার টাকা। এতে ইলিশের দামও হয়ে যায় দ্বিগুণ। গত বছর ফেনী নদীর মোহনায় ভালো ইলিশ ধরা পড়লেও বহিরাগত জেলেদের উৎপাতে এবার তারা চার ভাগের এক ভাগ মাছও ধরতে পারছে না। জেলেদের অভিযোগ, নদীতে বহিরাগত জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরার ফলে মাছের প্রজনন নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কিনারে আসতে পারছে না মাছ। স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী ও জেলে প্রিয় লাল জলদাস জানান, ফেনী নদী থেকে শুরু করে সন্দ্বীপের চ্যানেলে সাগর মোহনা এলাকায় জেলেরা মাছ ধরেন তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। আগে ছোট ও বড় ফেনী নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত নিয়মিত। মাঝে পরিমাণে কমে গিয়েছিল। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এবার আরও কম। জেলেরা যে টাকা ঋণ করে নদীতে মাছ ধরতে যান, সেই টাকা এখন আর উঠে আসছে না। ফলে তাদের ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আবছার জেলে বিশ বছর ধরে এ নদীতে মাছ ধরছেন। তিনি জানান, তার নৌকাটি বড়। ১০/১২ জন জেলে নিয়ে নদীতে যান মাছ ধরতে। তিনি প্রতিবার বিনিয়োগ করেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু যে পরিমাণ মাছ পেয়েছেন, তা বিক্রি করে পেয়েছেন ১৩ হাজার টাকা। এতে এক চালানে তার লোকসান হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। তিনি জানান, বরিশাল অঞ্চলের জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। প্রায় ৩০০ নৌকা সেখানে মাছ ধরছে। সে জালে সব ধরনের মাছের ক্ষতি হচ্ছে। মাছের রেণুও মারা যাচ্ছে। তাদের উৎপাতে উজানের দিকে মাছ আসছে না। তিনি মনে করেন, কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করা গেলে বড় ফেনী নদীতে মাছ পাওয়া যেত বেশি।

স্থানীয় এক ক্রেতা জানান, বড় ফেনী নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে শুনে খুশিতে তিনি মাছ কিনতে এসেছেন ঘাটে। কিন্তু এখানে এসে তেমন মাছ দেখতে না পেয়ে হতাশ তিনি। যাও মাছ আসছে সে মাছের দাম চড়া। নাগালের বাইরে। কিনতে না পেরে খালি হাতে ফিরে যান তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জানান, ফেনী নদী ইলিশের একটি রুট ঠিক আছে। তবে এটি সন্দ্বীপ চ্যানেল হয়ে সমুদ্রের দিকে চলে গেছে। নদী ও সাগরে জেলেদের জালে ইলিশসহ অন্য প্রজাতির মাছও ধরা পড়ছে ঠিকই। তবে ইলিশের সংখ্যা কম। কারেন্ট জাল ও বহিরাগত জেলেদের বিরুদ্ধে নদীতে অভিযান চালাতে কেনা হয়েছে স্পিডবোট। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাদের ধরতে শিগগিরই চালানো হবে অভিযান। তিনি জানান, ফিশলেন্ডিং সেন্টার স্থাপন করা গেলে দাদনকারী অথবা মহাজনের কাছ থেকে জেলেরা তাদের মুক্ত করতে পারলে ইলিশের দাম আরও কমবে। কিন্তু জমি পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়রা মনে করেন, সিন্ডিকেট আর দাদনকারীদের হাত থেকে জেলেরা রেহাই পেলে ইলিশের কেজি প্রতি দাম থাকবে হাজার টাকার নিচে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর