শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বপ্ন দেখছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

নজরুল মৃধা, রংপুর

স্বপ্ন দেখছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে নয়াদিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে ৮ সেপ্টেম্বর। জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ ও দ্বিপক্ষীয় সফর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত যাচ্ছেন। সেখানে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনার আভাস পাওয়া গেছে। এ খবরে তিস্তাপাড়ের মানুষ আবারও আশায় বুক বাঁধছে। আলোচনার মাধ্যমে এবার তিস্তার ন্যায্য হিসসা পাওয়া যেতে পারে। জানা গেছে, ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লি পৌঁছানোর কিছু সময় পরই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। দুই প্রধানমন্ত্রী এ সময় একান্ত বৈঠকও করবেন। এবারে বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে না। তবে যেসব সিদ্ধান্ত হবে তা পরে ঢাকা বা দিল্লিতে স্বাক্ষর হবে। তাই তিস্তাপাড়ের মানুষ পানির প্রাপ্তি নিয়ে আশান্বিত হয়ে উঠেছে। তবে নদী নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাদের মতে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। সহজে পানি পাওয়া যাবে না। আবারও হতাশ হতে হবে তিস্তাপাড়ের মানুষকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গজলডোবায় তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহার করায় রংপুর অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়। আবার বর্ষা মৌসুমে দুই কূল উপচে বন্যা দেখা দেয়। তাই আশায় বুক বেঁধে রয়েছে তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষ। তারা মনে করে, ভারত হয়তো তিস্তাপাড়ের মানুষের কান্না শুনে শুকনো মৌসুমে পানির ন্যায্য হিসসা দেবে। এদিকে গতকাল দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রিভারাইন পিপল ক্লাবের উদ্যোগে তিস্তায় পানির ন্যায্য হিসসার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটসংলগ্ন পার্ক মোড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ছাওমুন পাটোয়ারী সুপ্তর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন রিভারাইন পিপলের পরিচালক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, বাংলা বিভাগের শিক্ষক খাইরুল ইসলাম পলাশ, রিভারাইন পিপলের তিস্তা সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মঞ্জুর আরিফ, শালমারা নদী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাহ জালাল, দুধকুমার নদ সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক গ্রিন ইকোর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সঞ্জয় চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নদী সংগঠক আরিফুজ্জামান আরিফ প্রমুখ। জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদনদী রয়েছে। বিভিন্ন সময় ভারত তাদের দেশের উন্নয়নের কথা বলে ৫২টি নদনদীতেই বাঁধ দেওয়ায় এ দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। শুষ্ক মৌসুমে ভারত এসব নদনদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার করে নিয়ে বাংলাদেশকে প্রকৃতিদত্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের প্রতিবাদ ও পানির ন্যায্য হিসসার দাবি বিভিন্ন সময়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত তিস্তা পানি বণ্টনের কার্যকর কোনো চুক্তি হয়নি। ২০১৬ সালে তিস্তাসহ অন্যান্য নদনদীর পানি বণ্টন চুক্তি হয় হয় করেও হয়নি। তিস্তার পানি নিয়ে ২০০৫ সালে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রিপর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ২০০৬ সালে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও ভারত সরকারের আগ্রহ না থাকায় হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বৈঠকের প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় উভয় দেশ তিস্তা চুক্তির লক্ষ্যে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের অন্তর্বর্তীকালীন তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ছিল। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে নয়াদিল্লিতে জেআরসির সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে তিস্তা চুক্তি ছাড়াও অন্যান্য অভিন্ন নদনদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত নদীর ভাঙন রোধসহ পানির ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত আলোচনা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সান্ত্বনা ছাড়া কিছুই জোটেনি। তিস্তা নিয়ে এ পর্যন্ত কোনো চুক্তি হয়নি। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের জেআরসি গঠনের পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাইয়ে দুই দেশের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত এবং ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে তিস্তার পানিপ্রবাহের পরিমাণ, কোন কোন জায়গায় ভাগাভাগি হবে এরকম কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ আশা জেগেছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাংলাদেশ সফর ঘিরে। কিন্তু আশাহত হতে হয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষকে। তিস্তা নিয়ে কোনো চুক্তি আজ পর্যন্ত হয়নি। পানি প্রাপ্তির সব আশা মুছে গিয়ে হতাশা গ্রাস করেছে তিস্তাপাড়ের লাখ লাখ মানুষকে। ফলে দেশের সর্ববৃহৎ ব্যারাজে পানি প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

নদীবিষয়ক গবেষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তার আজ মরণদশা। ফলে আশীর্বাদের তিস্তা অভিশাপে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন অনুযায়ী ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার অবৈধ ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এবং জীববৈচিত্র্য তথা রংপুরের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির স্বার্থে তিস্তায় ন্যায্য হিসসার ভিত্তিতে পানি পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করার দাবি জানান তিনি।

‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’-এর সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ‘তিস্তার পানি বণ্টন রাজনৈতিক ইস্যু। এটি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর