বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কুষ্টিয়া মেডিকেল নিয়ে অনিশ্চয়তা

পড়ে আছে শত কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে বহির্বিভাগসহ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ না হলেও বিদেশ থেকে আনা হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম। এগুলো অরক্ষিত অবস্থায় দিনের পর দিন হাসপাতাল ভবনে পড়ে রয়েছে। দফায় দফায় নবনির্মিত এ হাসপাতাল ভবনের বহির্বিভাগ চালুর সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বহির্বিভাগ চালুর বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন বহির্বিভাগ চালুর কথা ছিল। এসব কারণে স্বপ্নের মেডিকেল কলেজ নিয়ে হতাশ কুষ্টিয়াবাসী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ৩০ জুন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম ও জটিলতা সৃষ্টির কারণে ধাপে ধাপে একাধিকবার প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বেড়েছে। ফলে সর্বশেষ এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। সর্বশেষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় চলতি বছরের ৩০ জুন। আরও জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর ২০১১ সালে কুষ্টিয়া মেডিকেল ট্রেনিং সেন্টার ম্যাটসে অস্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের যাত্রা হয়। অস্থায়ী ভবন থেকে স্থানান্তরের পর ২০২২ সালের ৩ মার্চ মূল ক্যাম্পাসে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হয়। প্রথম দফায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর ২০১৯ সালে নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের ছাদ ধসে এক শ্রমিক নিহত হলে কাজ আবার বাধাগ্রস্ত হয়। ছাদ ধসে মৃত্যুর ঘটনায় তখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী এবং তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর একনেক সভায় এ প্রকল্পের সংশোধিত ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) অনুমোদন করা হয়। তখন এ প্রকল্পের ব্যয় ২০৬ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৬৮২ কোটি টাকা ধরা হয়। আর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এদিকে ভবন নির্মাণ না হতেই গত জানুয়ারিতে প্রায় ৬৫ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি করা হয়। সাত-আট মাস ধরে মহামূল্যবান এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলা ও দোতলায় ধুলাবালুর মধ্যে অযত্ন-অবহেলায় বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দ্রুত এগুলো স্থাপন না হলে যন্ত্রপাতি অচল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নির্মাণকাজের বিষয়ে হাসপাতাল ভবনে নিযুক্ত ভান্ডার কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান জানান, হাসপাতাল ভবন চালু করতে গেলে এখনো অনেক কাজই বাকি রয়ে গেছে। এখানে কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম চরম অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে রয়েছে। এতে যে কোনো সময় বড় অনিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একাধিকবার বলা হলেও সাত-আট মাস ধরে এভাবে যন্ত্রপাতি অরক্ষিত পড়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আদৌ এ কাজ কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রকল্প পরিচালক ডা. সরয়ার জাহান জানান, বিগত ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করে হাসপাতাল ভবনটি চালু করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদফতর ও গণপূর্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন মহলে একাধিকবার তাগাদা পত্র দেওয়া হয়েছে। এখানে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝিমিয়ে পড়া নির্মাণকাজটি গতিশীল করা।

এদিকে আমদানি করা যন্ত্রপাতি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের স্টোর অফিসার মুসফিকুর রহমান বলেন, আমদানি করা মূল্যবান যন্ত্রপাতি এভাবে যদি দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয় তাহলে মেশিনগুলোর কার্যক্ষমতা হ্রাস এমনকি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর