বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেড় কেজি দিয়ে ধামাচাপার চেষ্টা

কাস্টমসে সোনা লুটে জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

খোয়া যাওয়া ৫৫ কেজি সোনা লুটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পরও আটক দুই কাস্টমস কর্মকর্তাসহ তিনজনকে গ্রেফতার দেখায়নি পুলিশ। তবে পুলিশ কাস্টডিতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাতে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। বিমানবন্দরে কাস্টমস বন্ড হাউসে ছয়টি ‘ডিএম’ গায়েব হওয়ার বিষয়টি প্রথম ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে বিষয়টি বিভিন্ন সংস্থা টের পাওয়ার কারণে তা আর গোপন থাকেনি বলে বাধ্য হয়েই বিষয়টি পুলিশকে জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় দুই কাস্টমস কর্মকর্তাসহ তিনজনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম শাহেদ ও সিপাই নিয়ামত হাওলাদার। বিমানবন্দর থানায় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার থেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরই মধ্যে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। একাধিক সোর্স এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বর্ণ লুট ও বেচাকেনার সঙ্গে এই তিনজনের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েও তাদের গ্রেফতার দেখায়নি পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাচ্ছে, চক্রটি কাস্টম হাউস থেকে দীর্ঘদিন ধরে সুকৌশলে স্বর্ণ গায়েব করছিল। সেজন্যই সিসিটিভি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল কেপিআইর মতো এই প্রতিষ্ঠানের। তবে স্পর্শকাতর এই ঘটনার সঙ্গে অবশ্যই একটি বড় এবং শক্তিশালী চক্র জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সাল থেকে লকারের স্বর্ণ গায়েব হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে অন্তত দুই ডজন কাস্টমস কমকর্তা ও কর্মচারী জড়িত। জানা যায়, বিমানবন্দরে কাস্টমস বন্ড হাউসে ছয়টি ‘ডিএম’ গায়েব হওয়ার বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ টের পান গত ১৭ আগস্ট। এরপর নি¤েœাক্ত নম্বরের ছয়টি ‘ডিএম’ (২০২৩০৮৫৩৬০৩, ২০২৩০৮৫৩৬০৬, ২০২৩৩০৮৫৩৬১৪, ২০২৩০৮৫৩৬১৮, ২০২৩০৮৫৩৬১৯, ২০২৩০৮৫৩৬২১)- এর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন গুদামের দায়িত্বরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম শাহেদ। এক পর্যায়ে প্রায় দেড় কেজি সোনার বার বাইরে থেকে সংগ্রহ করে ভল্টে ঢুকিয়ে রেখে বিষয়টি সেখানেই ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল শহিদুল, শাহেদ ও তাদের নেপথ্য মদদদাতারা। তবে বিষয়টি বিভিন্ন সংস্থা টের পাওয়ার কারণে তা আর গোপন থাকেনি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছেন, কেঁচো খুঁড়তে গিয়েই সাপ বেরিয়ে আসার মতো ঘটনা ঘটে। বাধ্য হয়েই বিষয়টি পুলিশকে জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে গত রাত সাড়ে ছয়টার দিকে ডিবির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আকরাম হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এখনো কাউকে গ্রেফতার দেখাইনি। তিনজনসহ অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমস সূত্র বলছে, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম শাহেদ শীর্ষ এক কর্মকর্তার আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন। তাদের ভয়ে তটস্থ থাকতেন অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। শীর্ষ কর্মকর্তার আশকারা পেয়েই তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা কাস্টমসের সুরক্ষিত ভল্ট থেকে স্বর্ণ লুটের বিষয়টি জানাজানি হয় গত রবিবার। এ ঘটনায় চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চার সিপাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ। শুল্ক বিভাগ একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি ৫০১ গ্রাম সোনা খোয়া গেছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি। সাধারণত বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ করা সোনার বার, অলংকারসহ মূল্যবান জিনিস এই গুদামে রাখা হয়। গুদামে রক্ষিত স্বর্ণের হিসাব মেলাতে গিয়েই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।

সর্বশেষ খবর