চোখের দৃষ্টি না থাকলে কী হবে সুরের বৃষ্টিতে দর্শক-শ্রোতাদের ভেজালেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। দুনিয়ার আলো না দেখা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকা এই মানুষগুলো শরতের বিকালে শিল্পের নান্দনিকতায় আলোর দ্যুতি ছড়ালেন আলোয় ভরা মানুষের সামনে। সুরে সুরে মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়ে নিজেদের প্রতিভার ছাপ রাখলেন সমাজের অবহেলিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। কণ্ঠ থেকে সুরের বৃষ্টি ঝরিয়েই ক্ষান্ত হননি; আবহমান বাংলার শেকড়ের সংস্কৃতি পল্লীগীতি, লালন, হাছন রাজার গানগুলো নিজেদের কণ্ঠে তুলে ধরার পাশাপাশি শাস্ত্রীয় নাচের মায়াজাল ছড়িয়ে মোহনীয়তার তরঙ্গে ভাসিয়ে নিলেন দর্শক-শ্রোতাদের। এমন চিত্রই ছিল জাতীয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সংস্থার ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে। আলোচনা, কেক কাটা, আর্থিক অনুদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জমকালো আয়োজনে উদযাপিত হলো জাতীয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সংস্থার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গতকাল রাজধানীর বকশীবাজারের নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনব্যাপী এ আয়োজন। কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বেলা ১১টায় আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন সংস্থার সদস্যরা। কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সংস্থার চেয়ারম্যান নুরুল আলম সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আইয়ুব আলী হাওলাদারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী।
জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের উপপরিচালক ভবেন্দ্রনাথ বাড়ৈ, লালবাগ জোনের উপপুলিশ কমিশনার মো. জাফর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর বিন আবদাল আজিজ (তামিম)। জমকালো এ আয়োজনে দেশের ১০০ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ৩ হাজার করে টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ২০ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে মাসিক ১ হাজার টাকা করে দুই মাসের জন্য ৪০ হাজার টাকা বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে ৫০ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর মাঝে ৩ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদানের পাশাপাশি আট দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে পুনর্বাসনের জন্য আটটি সেলাই মেশিন, ১২ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে ঘর নির্মাণের জন্য ১৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ, ২৪ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে ৩ হাজার টাকা করে চিকিৎসা সহায়তা, ১৪ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। আর চারজন মৃত ব্যক্তির দাফন বাবদ ৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ১৮০ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সদস্যকে নগদ ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। দিনব্যাপী এ আয়োজনে দেশের ৬ শতাধিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অংশ নেন।
