শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কে বাঁচাবে কর্ণফুলী নদী

নদীর বুকেই বাস-ট্রাক টার্মিনাল, ড্রাইডক ও মাছের আড়ত, অবৈধ স্থাপনায় চলছে ব্যবসা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কে বাঁচাবে কর্ণফুলী নদী

কর্ণফুলী নদী দখল করে তৈরি করা হয়েছে বস্তিসহ কাঁচাপাকা নানা স্থাপনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর উত্তর পাড়। এখান থেকে চাক্তাই খালের মুখ পর্যন্ত বিশাল অংশ। এ অংশে অবৈধভাবে তৈরি হয়েছে নানা স্থাপনা। কেউ নিজে তৈরি করে, কেউ ভাড়া নিয়ে, কেউ ছোট টঙের দোকান নির্মাণ করে নদীর বুকের ওপরই হয়েছে বাণিজ্যিক ও বসতি স্থাপনা। নদীর বুকেই তৈরি করা হয়েছে বাস-ট্রাকের স্টেশন, বিশাল মাছের আড়ত ও মসজিদ।

সরেজমিন দেখা যায়, নদী দখল করে নির্মিত হয়েছে বস্তি। এখানে তৈরি করা ছোট ছোট রুমগুলো দেওয়া হয়েছে ভাড়া। রীতিমতো সেখানে চলে টিকা কর্মসূচিও। নদীর তীরেই আছে শত শত ঘর ও দোকান। এখানেই আছে ‘আইনগত নোটিস’ নামে পাঁচ সাইন বোর্ড। তারপরও প্রতিনিয়তই নির্মিত হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। অবস্থা দেখে মনে হয়, কর্ণফুলী নদী দেখার কেউ নেই। এটি একটি অভিভাবকহীন নদী। নদীর বুক চিড়েই গড়ে উঠেছে বিশাল আয়তনের মাছের আড়ত। নির্মিত হয়েছে সোনালি যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতি, ভেড়া মার্কেট শ্রমজীবী কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড, মৎস্য শ্রমিক লীগ, চট্টগ্রাম ট্রাক-বাস মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নামেও। তবে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ নেই। জানা যায়, ২০১৫ সালে আদালতের নির্দেশনা মতে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশ করে। এ ছাড়া, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের ২ হাজার ৪৯২টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে। তবে তা এখনো প্রকাশ করেনি। নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় মহানগর অংশে আছে ৪৯৮টি। এর মধ্যে আছে ডকইয়ার্ড, বস্তিবাড়ি, দোকান, জেটি, বন্দর, বহুতল ভবন, তেল পরিশোধন কেন্দ্র, তেল ডিপো, সিমেন্ট কারখানা, কোল্ড স্টোরেজ। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদী-সংলগ্ন সাতটি উপজেলাভিত্তিক তালিকাও প্রকাশ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখলদার রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়, ৯২৭ জন। বোয়ালখালীতে আছে ২৬৬টি স্থাপনা, রাউজানে ১৭১টি, পটিয়ায় ১১টি, কর্ণফুলীতে ১৯৭টি ও আনোয়ারায় ১৬টি। সোনালি যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল হক বাবুল বলেন, ‘প্রায় সাত মাস আগে নদী রক্ষা কমিশন ও জেলা প্রশাসক আমাদের মাছের আড়তটি পরিদর্শন করেছেন। তখন তারা আমাদের বলেছিলেন, অন্যদিকে একটি জায়গা খুঁজে বের করতে। সেখানে আমাদের স্থানান্তর করতে সহযোগিতা করা হবে। ততদিন পর্যন্ত আমাদের এখানে ব্যবসা করতে বলা হয়। এরপর থেকে আমাদের আর কেউ কিছু বলেননি।’ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, আদালতের নির্দেশনা মতে বারিক বিল্ডিং থেকে বিআইডব্লিউ ঘাট পর্যন্ত থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন আমাদের জায়গায় কোনো অবৈধ স্থাপনা নেই। তবে নদী রক্ষা কমিশন নতুন তালিকা দিলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও নদী গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, দেশের অর্থনীতির হৃৎপি চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দর বাঁচাতে হলে কর্ণফুলী নদীকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে। এজন্য কর্ণফুলীকে নিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনে সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, আমাদের দাবি হলো- আদালতের নির্দেশনা অনুসারে চিহ্নিত অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা। এখন সেটি না করায় প্রতিনিয়ত নানাভাবে দখল হচ্ছে কর্ণফুলী। এভাবে দখল হতে থাকলে এটি এক দিন হারিয়ে যাওয়া নদীর তালিকায় পড়ে যাবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর