শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর স্যালাইনের সংকট বাড়াচ্ছে ‘সাদা কাগজ’

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ডেঙ্গু রোগীর জন্য ব্যবহৃত ডেক্সাট্রোজ নরমাল স্যালাইনের (ডিএনএস) নামটি সাদা কাগজে লিখে ফার্মেসি থেকে কেনা হচ্ছে। এটি কিনে তা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর কাছে দ্বিগুণ-তিন গুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু পরে প্রকৃত রোগীরা আবার সে ডিএনএস ফার্মেসিতে পাচ্ছেন না।            

এভাবে চিকিৎসক বা হাসপাতালের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সাদা কাগজে স্যালাইনের নাম লিখে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি তা কেনাবেচা করছেন। ফলে বাজারে তৈরি হচ্ছে ডিএনএসের কৃত্রিম সংকট। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযানও পরিচালনা করে। তবুও কিছু ফার্মেসির দৌরাত্ম্য থামছেই না। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলোতে এখন আর সাদা কাগজে লেখা নিয়ে স্যালাইনের জন্য গেলে তাকে দেওয়া হচ্ছে না। তারা এখন ‘নো প্রেসক্রিপশন নো স্যালাইন’ নীতি বাস্তবায়ন করছে। জানা যায়, দেশে বর্তমান বেসরকারি ছয়টি কোম্পানি ডিএনএস উৎপাদন করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো আগে দিনে এক শিফটে স্যালাইন উৎপাদন করলেও এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর থেকে ২৪ ঘণ্টাই উৎপাদন করছে। কিন্তু এখন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ডিএনএসের চাহিদা ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে অতীতের চেয়ে এখন উৎপাদন বাড়ার পরও কোনো কোনো এলাকায় ডিএনএসের সংকট দেখা দেয়। তাছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের নির্দেশনায় এখন ডিএনএস সরাসরি হাসপাতাল এবং নির্দিষ্ট ফার্মেসিতে দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে চমেক হাসপাতাল এবং মা শিশু জেনারেল হাসপাতালেই বেশি দেওয়া হচ্ছে ডিএনএস।

পাঁচলাইশ ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমাদের বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে সাদা কাগজে লিখে ডিএনএস কিনে নিয়ে নানাভাবে বেশি দামে বিক্রি করার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরকে অবহিত করি। পরে সবার সঙ্গে সভায় আলোচনা করে সাদা কাগজে লেখা দিয়ে ডেঙ্গুর স্যালাইন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফীন বলেন, বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে অসাধু কিছু মানুষ সাদা কাগজে লিখে ডিএনএস কিনে পরে তা বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করছে। এ কারণে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। এখন থেকে আর কাউকে সাদা কাগজে ডেঙ্গুর স্যালাইন বিক্রি করা হবে না। ফার্মেসিগুলো এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে।

জানা যায়, ১০০০ মিলিগ্রামের একটি ডিএনএসের খুচরা মূল্য ৮৫-৮৭ টাকা এবং ৫০০ মিলিগ্রামের মূল্য ৬৫ টাকা। কিন্তু এখন অনেক ফার্মেসি একটি ডিএনএস ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে। ফার্মেসিতে ডিএনএস থাকার পরও বেশি দামে বিক্রির জন্য ক্রেতাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। ফলে বাজারে স্যালাইনটির কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনের ফার্মেসিগুলোতে জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা ডিএনএস স্যালাইন কিনতে গেলে ‘নেই’ বলে ফিরে দেয়। কিন্তু একটু পরেই জেলা প্রশাসনের অভিযান দল সেখানে গেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিএনএস স্যালাইন উদ্ধার করে। এ সময় ডিএনএস স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট ও ওষুধের বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপরাধে চারটি ফার্মেসিকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে ২৫ জুলাই নগরের হাজারী গলিতে অভিযান চালিয়ে ১৫০ লিটার ডিএনএস জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে এসব স্যালাইন একটি হাসপাতালের ফার্মেসিতে ন্যায্য দামে বিক্রি করা হয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর