সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভারতীয় প্রেমিকের বিয়ের কথা জানতে পেরে ফিরে এলেন এক নারী

কলকাতা প্রতিনিধি

সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়। এরপর প্রেম। আর সে প্রেমের টানেই তিন সন্তানকে নিয়ে ভারতে এসেছিলেন এক বাংলাদেশি নারী। স্বপ্ন ছিল ভারতীয় ওই প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধবেন। সে লক্ষ্যে প্রেমিকের বাসায় পৌঁছেন ওই নারী। কিন্তু তখনো অজানা ছিল যে তার ভারতীয় প্রেমিক বিবাহিত। পরে যখন জানলেন প্রেমিক বিবাহিত, তখন হতাশ হয়েই তিন সন্তানকে নিয়ে ফের দেশে ফিরে গেলেন ওই বাংলাদেশি প্রেমিকা। গতকাল একথা জানিয়েছে উত্তর প্রদেশ পুলিশ। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে ভারতের উত্তর প্রদেশের শ্রাবস্তী জেলায় আসেন তিন সন্তানের মা চট্টগ্রামের দিলরুবা শারমীন রুম্পা নামে ওই বাংলাদেশি নারী। অন্যদিকে শ্রাবস্তী জেলার মালহিপুর এলাকার ভরথা রোশনগড় গ্রামের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী আবদুল করিম, পেশায় একজন শেফ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনের একটি হোটেলের শেফ আবদুল করিমের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় দিলরুবার।

 

কভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন মারা যান দিলরুবার স্বামী। স্বাভাবিকভাবেই অসহায় বোধ করছিলেন তিনি। আর্থিক সমস্যায় পড়ে দিলরুবার পরিবার। এমন অবস্থায় বিউটিশিয়ানের কাজ শুরু করেন দিলরুবা। এরই মধ্যে আবদুল করিমের সঙ্গে পরিচয় হয় স্বামীহারা দিলরুবার। সময় যত গড়ায় তাদের সম্পর্ক তত গাঢ় হয়। এরপর তারা দুজনেই বিয়ে করবেন বলেও স্থির করেন। আর করিমের সঙ্গে ঘর বাঁধবেন বলে তিন সন্তান সানজিদা (১৫), মোহাম্মদ সাকিব (১২) ও মোহাম্মদ রাকিব (৭)-কে নিয়ে টুরিস্ট ভিসায় উত্তরপ্রদেশের লখনউ পৌঁছেন দিলরুবা।

২৬ সেপ্টেম্বর যেদিন দিলরুবা বাংলাদেশ থেকে লখনউ পৌঁছেন, ওই একই দিনে বাহরাইন থেকে লখনউতে অবতরণ করেন আবদুল করিম। এরপর তারা পাঁচজন একটি বাসে বাহরাইচ পৌঁছান। কিন্তু নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর আগে করিম ওই চার বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি হোটেলে দুই দিন অবস্থান করেন। 

জানা যায়, সামাজিকমাধ্যমে তাদের উভয়ের মধ্যে পরিচয় হওয়ার সময় করিম নিজেকে অবিবাহিত বলে জানিয়েছিলেন। যদিও দিলরুবা নিজের কোনো পরিচয় গোপন করেননি। এদিকে হোটেলে ওই বাংলাদেশি নারীর সঙ্গে দুই দিন অবস্থানের পর করিম তাদের নিয়ে নিজের বাড়িতে পৌঁছেন। বাড়িতে পৌঁছানোর পর দিলরুবা জানতে পারেন করিম বিবাহিত এবং তার এক সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে ওই বাংলাদেশি নারীকে দেখেই কার্যত মেজাজ হারান আবদুল করিমের স্ত্রী। রীতিমতো চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দেন তিনি। এক সময় উত্তেজনাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে আবদুল করিমের প্রতিবেশীরা দ্রুত খবর দেন স্থানীয় পুলিশকে। একই সঙ্গে খবর দেওয়া হয় ভারত-নেপাল সীমান্তে প্রহরারত সশস্ত্র সিমা বল (এসএসবি) কর্মকর্তাদের।

পুরো ঘটনা জানার পর নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো তৎপর হয়ে তদন্ত শুরু করে। এমন এক পরিস্থিতিতে তিন সন্তানকে নিয়ে দিলরুবা দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।

মালহিপুরের ‘স্টেশন হাউস অফিসার’ (এসএইচও) ধর্মেন্দ্র কুমার জানান, ওই বাংলাদেশি মহিলা ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে এসেছিলেন। তদন্তে এখনো পর্যন্ত কোনো অপরাধমূলক কিছু পাওয়া যায়নি। তার ট্যুরিস্ট ভিসাও বৈধ ছিল। শনিবার তিনি লখনউতে ফিরে আসেন এবং সেখানকার এক স্থানীয় এজেন্টের কাছ থেকে টিকিট কেটে সম্ভবত সেখান থেকেই বাংলাদেশের উদ্দেশে চলে যান। আবদুল করিমও বাহরাইনে ফিরে যাওয়ার কথা বলে চলে যান।

শ্রাবস্তী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবীণ কুমার যাদব বলেন, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, সশস্ত্র সিমা বল এবং অ্যান্টি-টেরোরিস্ট স্কোয়াডের কর্মকর্তারা উভয়কেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কিন্তু সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পাননি। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আর জানান, বাংলাদেশি নারী নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলে চলে যান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর