বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আলু বীজ নিয়ে সিন্ডিকেটের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

আলু বীজ নিয়ে সিন্ডিকেটের শঙ্কা

আলুর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পরে এবার বীজ সংকটের আশঙ্কা করছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষক। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসি মোট বীজের ৫/৬ শতাংশ সরবরাহ করতে পারে। বাকি আলু বীজ স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করেন কৃষকরা। হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীদের ওপর আলু বিক্রির চাপ বাড়ায় অনেকে ভয়ে বীজ আলুও বিক্রি করে ফেলছেন। আবার কেউ কেউ বেশি লাভের আশায় আলুর বীজ বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে আসন্ন মৌসুমে বীজ আলু নিয়ে গড়ে উঠতে পারে সিন্ডিকেট। চাহিদা মতো বীজ না পেলে আলুর আবাদ কমে যাবে। আবাদ কম হলে আবারও বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে কতিপয় ব্যবসায়ীর কাছে। হিমাগার মালিক সমিতি, স্থানীয় ব্যবসায়ী, কৃষক ও বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রতি বছর ১ লাখ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়ে থাকে। মোট আবাদের ৩০ শতাংশ আলু বীজের প্রয়োজন হয়। রংপুর অঞ্চলে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টনের মতো বীজের প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে বিএডিসি সরবরাহ করতে পারে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন। বড়-বড় কৃষক রোপণের বীজ আলু নিজেদের সংগ্রহে রাখলেও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বীজ আলু ব্যবসায়ী পর্যায়ে সংগ্রহ করতে হয় কৃষকদের। এবার আলুর দাম বৃদ্ধির ফলে অনেকে লাভের আশায় বীজ আলুও বিক্রি করে ফেলছেন। আবার অনেকে ভোক্তা অধিদফতরের অভিযানের ভয়ে হিমাগার থেকে বীজ আলু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। অনেক স্থানে আগাম আলু রোপণ করা শুরু হলেও দুই সপ্তাহ পরে পুরোদমে আলু রোপণের কাজ শুরু হবে রংপুর অঞ্চলে। এ সময় বীজ নিয়েও আলুর মতো কেলেঙ্কারি শুরু হতে পারে। এমনটা মনে করছেন সাধারণ কৃষক। তারা অভিযোগ করে বলেন, আলুর নিয়ন্ত্রণ মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে চলে যাওয়ায় কৃষক পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। প্রতি মৌসুমে ৬০/৭০ টাকা কেজি দরে বীজ আলু ক্রয় করলেও এবার কত দামে ক্রয় করতে হবে, তা জানেন না কৃষক। কৃষকের আশঙ্কা, আলুর বীজ মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে এবার অনেকে আলুর আবাদ করতে পারবেন না। ফলে এই অঞ্চলে আলুর উৎপাদন কমে যাবে।

বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আলুর দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার যেভাবে আলু ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে তাতে অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে বীজ আলুও বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বেশি দাম পাওয়ার আশায় বীজ আলুও মজুদ করে রেখেছেন। তবে হিমাগার মালিকরা বলেছেন হিমাগারে প্রচুর বীজ আলু রয়েছেন। বীজ আলু নিয়ে কোনো সংকট হবে না।

সূত্র মতে, রংপুরে ৪৩, দিনাজপুরে ১৫, গাইবান্ধায় ৬, কুড়িগ্রামে ৫, লালমনিরহাটে ১২, ঠাকুরগাঁওয়ে ২০ এবং পঞ্চগড়ে ১০টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যায়। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, হিমাগারে প্রচুর বীজ আলু রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, হিমাগারগুলোতে এখন খাবার আলু রয়েছে ২৫ শতাংশ এবং বীজ আলু রয়েছে ২২ শতাংশ। রংপুর বিএডিস (বীজ বিপণন) উপপরিচালক মো. মাসুদ সুলতান বলেন, বিএডিসি রংপুর অঞ্চলে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত বীজ আলু সরবরাহ করতে পারে। বাকি বীজ কৃষকরা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর