মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অস্টিওপোরোসিস রোধে সচেতনতা স্ক্রিনিং সঠিক চিকিৎসা জরুরি

গোলটেবিলে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অস্টিওপোরোসিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভিটামিন ডির স্বল্পতা, দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাসের ওষুধ ও স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবন, খাদ্যে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ও আমিষের অভাবে হাড়ক্ষয়ের রোগ বাড়ছে। ৫০ বছরের ঊর্ধ্ববয়সীদের প্রতি তিনজনে একজন নারী এবং প্রতি পাঁচজনে একজন পুরুষে অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগে ভুগছে। অস্টিওপোরোসিস রোধে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের সচেতনতা বাড়ানোসহ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের স্ক্রিনিং, পরীক্ষা ও সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা জরুরি। গতকাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ কনফারেন্স হলে ‘শক্ত ও মজবুত হাড় গঠন করুন’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজেন করা হয়। বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস-২০২৩ উপলক্ষে যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে অস্টিওপোরোসিস টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি ও কালের কণ্ঠ। গোলটেবিল বৈঠকটির সঞ্চালনা করেন দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, অস্টিওপোরোসিস নিয়ে সচেতনতার জায়গায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসকসমাজসহ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় জড়িত সবার ভূমিকা জরুরি। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (শিক্ষা), বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও অস্টিওপোরোসিস টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফারুক পাঠান বলেন, নানা কারণে হাড়ক্ষয় হতে পারে। এর মধ্যে কিছু কারণ আছে যেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। যেমন যত বয়স বাড়বে ততই অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়বে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে হাড়ক্ষয় হতে পারে। মেয়েদের বেলায় মেনোপজের (ঋতুস্রাব বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া) পর হাড় দ্রুত ক্ষয় হতে থাকে, ৬৫ বা ৭০ বছর বয়সের পর তা আরও দ্রুত ক্ষয় হতে থাকে। এ ছাড়া পরিবারের কারও মধ্যে হাড়ক্ষয়ের প্রবণতা জিনগতভাবে থাকলে তা অন্য সদস্যদের মধ্যেও আসতে পারে।

অস্টিওপোরোসিস টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বিএসএমএমইউয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, বিশ্বে ৫০-ঊর্ধ্ব নারীর তিনজনে একজন ও পাঁচজনে একজন পুরুষের হাড়ক্ষয়ের রোগ আছে। ৬০-৭০ বছরের নারীর পাঁচজনে একজন, ৭০-৮০ বছরের প্রতি তিনজনে দুজন, পুরুষের ক্ষেত্রে তিনজনে একজন এ সমস্যার শিকার হন।

বৈঠকে অস্টিওপোরোসিসের লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে কথা বলেন বারডেম হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সহসভাপতি ও অস্টিওপোরোসিস টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা ডা. ফারিয়া আফসানা। তিনি বলেন, অস্টিওপোরোসিস একটি নীরব রোগ। সাধারণত খুব বেশি লক্ষণ এটি প্রকাশ করে না। তার পরও আমরা কিছু কিছু লক্ষণ দেখলে চিন্তা করি, ওই পুরুষ বা মহিলার অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ থাকতে পারে।

অস্টিওপোরোসিস টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এভারকেয়ার হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আহসানুল হক আমিন বলেন, অস্টিওপোরোসিস হলো একটি বিশেষ অবস্থার পরিণতি। এজন্য আমাদের এর প্রতিরোধে নজর দিতে হবে। স্কুল-কলেজে পড়ুয়াদের সূর্যের আলো গায়ে লাগানো এবং খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।

অস্টিওপোরোসিস টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির উপদেষ্টা ও বিএসএমএমইউয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফা মোস্তারী বলেন, সুস্থ জীবন ব্যবস্থা মেনে চলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরচর্চার যেমন হাড় গঠনে ভূমিকা রয়েছে, তেমন তা মাংসপেশিকে শক্ত করতেও ভূমিকা রাখে।

হাড়ক্ষয় নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো তুলে ধরেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সদস্য (নির্বাহী কমিটি) ও অস্টিওপোরোসিস টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা ডা. আফসার আহাম্মদ (মেরাজ)। তিনি বলেন, প্রচলিত একটি ধারণা হলো, শুধু মহিলারাই অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হয়। তবে অস্টিওপোরোসিসে নারীদের আক্রান্তের হার ৮০ শতাংশ হলেও পুরুষও বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়স যাদের, তাদের শতকরা ২০ ভাগ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর