রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মায়ের চেয়ে ছেলে বড়

তথ্য গোপন করে সরকারি চাকরি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

তথ্য গোপন ও জালিয়াতি করে ২০১৮ সালে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) পদে সরকারি চাকরি নেন কুবিরা বেগম। তার আগের এনআইডি কার্ডে বয়স ছিল ৪১ বছর। কিন্তু সরকারি চাকরি নিতে গিয়ে তথ্য গোপন করে ১৬ বছর কমিয়েছেন তিনি। এতে তার বড় ছেলের চেয়ে তিনি (কুবিরা) দুই দিনের ছোট হয়ে গেছেন।

কুবিরা বেগম রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের কুবাদ আলীর মেয়ে। তার স্বামীর নাম জালাল। কুবিরা বেগমের তিন সন্তান। বর্তমানে তিনি মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ইউনিটে পরিবার কল্যাণ সহকারী  হিসেবে কর্মরত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কুবিরা বেগমের আগের জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ ছিল ১৯৮১ সালের ১৬ জুন। সেখানে স্বামীর নাম জালাল ও পেশা গৃহিণী। কুবিরার সংশোধিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী জন্ম তারিখ ১৯৯৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর। আর বড় ছেলে আতিকুর রহমানের ভোটার তালিকা অনুযায়ী জন্ম তারিখ ১৯৯৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এই হিসাবে মায়ের চেয়ে বড় ছেলে আতিকুর দুই দিনের বড়।      অন্যদিকে মেজো ছেলে খাইরুজ্জামান লিটনের ভোটার তালিকা অনুযায়ী জন্ম তারিখ ২০০০ সালের ৫ জানুয়ারি।

মূলত সরকারি চাকরি পেতে স্বামীর নামের বদলে বাবার নাম বসান। পেশা গৃহিণী থেকে পরিবর্তন করে দেন সরকারি চাকরিজীবী।

কুবিরার জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার, মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), রাজশাহী জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাজশাহী আদালতে অভিযোগ ও মামলা দায়ের করেছেন বাকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজিজুল ইসলাম। আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশে লাখো বেকার। যারা    প্রকৃত মেধাবী তারা চাকরি পাচ্ছে না। আর    তিনি তথ্য গোপন করে ১৬ বছর কমিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি নিয়েছেন। অথচ ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই এর দিকে ওই নিয়োগের সময় শাহনাজ নামে এক চাকরিপ্রার্থী ছিলেন। তিনি ওই সময় কুবিরার ব্যাপারে আদালতে মামলাও করেছিলেন। কিন্তু চাকরি বাঁচাতে হাত-পা ধরে ওই চাকরিপ্রার্থীকে ম্যানেজ করে নেন কুবিরা। তাই বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

কুবিরা বেগম বলেন, ‘খুব অল্প বয়সে বিয়ে    হয় আমার। তখন জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল বয়স ছিল। পরে জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করেছি। আর নিয়ম   মেনেই চাকরি করছি, অনিয়ম করিনি। আমার ছেলে ও আমি আলাদা স্কুল থেকে এসএসসি  পাস করি। স্যারেরা ভুল করে বয়স ছেলের বেশি করে দিয়েছে।’

রাজশাহী জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপ-পরিচালক ড. কস্তুরী আমিনা কুইন বলেন, ‘এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। এত বড় একটা জালিয়াতি কী করে হলো? এনআইডিতে বয়স চেঞ্জ করে দিয়েছে যারা, তারাও একটা বড় অপরাধ করেছে। তাই এ ব্যাপারে একটা তদন্ত করা হবে। সম্ভবত ডিসি স্যার এ বিষয়ে দ্রুত একটি তদন্ত দেবেন। তদন্তের পরই বলা যাবে কী হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর