মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাহাড়ে মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব

রাঙামাটি প্রতিনিধি

পাহাড়ে মাসব্যাপী চলছে কঠিন চীবর দানোৎসব। লাখো পুণ্যার্থীর শ্রদ্ধায় সিক্ত পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন বিহারের ভিক্ষু সংঘ। আর রাঙামাটি রাজবনবিহারে মহাদানযজ্ঞ দানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মাসব্যাপী চলা পার্বত্যাঞ্চলের এ কঠিন চীবর দানোৎসব। চীবর দান উৎসবের আমেজ ছড়িয়েছে গোটা পার্বত্যাঞ্চলে। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে ভক্ত, অনুরাগী আর পুণ্যার্থীরা। ভিক্ষু সংঘের সাধু সাধু সাধু ধ্বনিতে শান্তির বার্তা দিয়ে যাচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুরা। সম্প্রতি প্রবারণা পূর্ণিমার মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়। উৎসব ঘিরে রাঙামাটিতে বইছে আনন্দ উল্লাস। রাঙামাটির প্রতিটি জেলা উপজেলার বৌদ্ধ বিহারগুলোতে পালন করা হচ্ছে এ কঠিন চীবর দানোৎসব। প্রতিদিন থাকছে চীবর দানের আয়োজন। মাসব্যাপী বিহারে বিহারে ঘুরে বৌদ্ধ পুণ্যার্থীরা ভান্তেদের চীবর দান করবেন।

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মতে, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার দিন বিহারে ফিরে আসে। প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এ প্রবারণার মধ্য দিয়ে ভিক্ষুদের বিহারে আমন্ত্রণ জানায় পুণ্যার্থীরা। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ফিরে আসার আনন্দে বস্ত্রদান অর্থাৎ কঠিন চীবর দানোৎসবের আয়োজন করা হয়। সারা বছরের জন্য ভিক্ষুদের পরিধানের বস্ত্র দান করা হয় চীবর দান উৎসবের মধ্য দিয়ে। এরই মধ্যে ধনপাতা বৌদ্ধ বিহার, বদ্ধু আংকার বৌদ্ধ বিহার ও সুবলং বৌদ্ধ বিহারে শেষ হয়েছে চীবর দানোৎসব।

স্থানীয় সেবিকা চাকমা বলেন, এ চীবর দানকে কঠিন চীবর দান বলার একটি কারণ আছে। কারণ ভিক্ষুদের পরিধানের বস্ত্র বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে। তার আবার রং করে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয় কাপড় বুনোন করার জন্য। রংটাও গাছের শিকড় আর বাকল দিয়ে তৈরি করা হয় পুরাপুরি প্রকৃতগতভাবে। চরকায় সুতা কাটার পর কোমর তাঁতে তৈরি করা হয় এ চীবর। যা আসলে অনেক কষ্ট সাধ্য। তাই এটাকে কঠিন চীবর বলা হয়। তারপর ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এটি বৌদ্ধভান্তেদের উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়।

রাঙামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, বছরের এ একটা সময় দূর-দূরান্ত থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সমাবেত হয় বিহারে। তখন সবার একটা উদ্দেশ্য থাকে তা হচ্ছে চীবর উৎসর্গ করা। তখন থাকে না কোনো হিংসা-বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা, ক্ষমতার গর্ব, বর্বরতা ও পাশবিকতার। বুদ্ধের প্রেম, সাম্য, মৈত্রী, ক্ষমা, ত্যাগ, অহিংসা, আত্মসংযম ও করুণার বশবর্তী হয়ে বিশ্বমানবের সুখ-শান্তি ও কল্যাণে ব্রত থাকে সবাই।

রাঙামাটি রাজ বনবিহার সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৩ ও ২৪ নভেম্বর রাঙামাটিতে শুরু হচ্ছে ৪৮তম কঠিন চীবর দান উৎসব। তার জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে বিহার কর্তৃপক্ষ।

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর