রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

৪৬ বছরের ইঞ্জিন দিয়েও চলছে ট্রেন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

বাংলাদেশ রেলওয়ে ৪টি বিভাগের মধ্যে উত্তরের জেলা লালমনিরহাট একটি। এই বিভাগের জন্য ১৯৬১ সালে আমেরিকা, কানাডা, হাঙ্গেরি ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২২০০ থেকে ২৯০০ সিরিজের আমদানি করা হয় ৩৩টি ইঞ্জিন। ১৯৬১ সালে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের জন্য সেগুলো আনা হয়েছিল। ১৯৮১ সালের পর আর কোনো ইঞ্জিন নতুনভাবে কেনা হয়নি এ বিভাগে। তবে সর্বশেষ ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা হলেও ২৯০০ সিরিজের (এমইআই-১৫) একটি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগকে দেওয়া হয়। এসব ইঞ্জিনের ইকোনমিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর নির্ধারিত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ওসব ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে গেছে প্রায় ৩৪ বছর থেকে ৪৬ বছর পর্যন্ত। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সূত্র জানায়, লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের ৬টি সেকশন, স্টেশনের সংখ্যা- ৭টি, ট্রেনের সংখ্যা- ৬৬টি, ট্রেন চলাচল বন্ধ- ২৬টি, বর্তমানে ট্রেন চলছে- ৪০টি। ট্রেনগুলো হচ্ছে- আন্তনগর ১৮টি, মেইল কমিউটার ২৯টির মধ্যে চলছে ২১টি, বন্ধ আছে ৮টি। লোকাল ট্রেন ২৪টির মধ্যে চলছে ৬টি, বন্ধ আছে ১৮টি। এতে ইঞ্জিন প্রয়োজন- ৬২টি, বর্তমানে আছে মাত্র- ৩২টি, তার মধ্যে ৪৬ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন- ৩১টি। 

এসব ট্রেনের ইঞ্জিন ১৯৬১ সালে আমেরিকা থেকে ২২০০ সিরিজের (এমইজি-৯) ১১টি, ১৯৬৯ সালে কানাডা থেকে ২৩০০ সিরিজের (এমইএম-১৪) ৮টি, ফের কানাডা থেকে ১৯৭৮ সালে ২৪০০ সিরিজের (এমইএম-১৪) আরও ৯টি এবং ১৯৮১ সালে হাঙ্গেরি থেকে ৩৩০০ সিরিজের (এমএইচজেড-৮) ৩টি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের জন্য আনা হয়েছিল। এরপর আর কোনো ইঞ্জিন কেনা হয়নি। তবে ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা ২৯০০ সিরিজের (এমইআই-১৫) একটি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগকে দেওয়া হয়। এসব ইঞ্জিনের ইকোনমিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর নির্ধারিত। কিন্তু আমেরিকা থেকে আনা ১১টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে গেছে ৩৪ বছর আগেই। কানাডা থেকে প্রথম ধাপে আনা ৮টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে ৪৬ বছর হয়েছে। অর্থাৎ এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২৬ বছর আগেই। দ্বিতীয় ধাপে কানাডা থেকে আনা ৯টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে ৩৭ বছর হয়েছে। এগুলোরও মেয়াদ পেরিয়েছে ১৭ বছর আগে। হাঙ্গেরি থেকে আনা ৩টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে ৩৪ বছর হয়েছে। এ ৩টি ইঞ্জিনের মেয়াদ ফুরিয়েছে ১৪ বছর আগে।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ জানায়, ৬টি সেকশনে আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়েই ৪০টি ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইঞ্জিন ও ট্রেনচালক তথা ক্রু সংকটের কারণে ২৬টি ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এ ডিভিশনে মাত্র একটি ইঞ্জিন ছাড়া অবশিষ্ট ৩১টিই ইকোনমিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে ১৮টি দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ৬টি ইঞ্জিন পরিত্যক্ত অবস্থায় কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানায় (কেলোকা) পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চালনায় অনুপযোগী বাকি ৮টি দিয়ে শান্টিং কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। সবকটি ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬২টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। অথচ লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের কাছে আছে মাত্র ৩২টি ইঞ্জিন।  এর মধ্যে ৬টি মেরামত অযোগ্য হওয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

 ট্রেন চালনায় অনুপযোগী ৮টি ইঞ্জিন শান্টিং কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অবশিষ্ট ১৮টি ইঞ্জিন তাও আবার মেয়াদোত্তীর্ণ কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে ৪০টি ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। 

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী শাহিনুর হক অপু জানান, দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে কিংবা রিলিফ ট্রেন পাঠানোর প্রয়োজন হলে অন্য কোনো একটি ট্রেন বাতিল করতে হয়, এতে নষ্ট হয় সময়। সমস্যা সমাধানে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (রাজশাহী) প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলীকে এসব সমস্যা উল্লেখ করে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় জোড়াতালি দিয়েই চলছে এ রেল বিভাগ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর