বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গম তেল সার আমদানিসহ ২০ দরপ্রস্তাব অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ১৮ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানিসহ ২০টি দরপ্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ ছাড়া স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৬৬১ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকার তেল, ডাল ও গম কিনবে সরকার। এসব দরপত্রের বিপরীতে মোট ব্যয় হবে ৩১ হাজার ৭৪০ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ২১০ টাকা। গতকাল ভার্চুয়ালি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান। তিনি বলেন, অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের চারটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ২টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২টি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ২টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ২টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। টেবিলে উপস্থাপিত তিন প্রস্তাবের মধ্যে সিভিল অ্যাভিয়েশনের ১টি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রস্তাব ছিল। তিনি আরও বলেন, নতুন বছর ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি থেকে জুন) জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি) ভিত্তিতে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনা হবে। ১৫ হাজার ৮২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দিয়ে এ জ্বালানি তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনা এবং চারটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ট্যারিফ অনুমোদন   দিয়েছে কমিটি।

 

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্তৃক ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলায় ২৪০ মেগাওয়াট (এসি) সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ট্যারিফ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেনা হলে ২০ বছর মেয়াদে এনার্জি রিনিউয়েবল বিডি লিমিটেড এবং পিডব্লিউআর এনার্জি ট্রেডিং এলএলসি কোম্পানিকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১০ দশমিক ৯৯৫ টাকা হিসাবে আনুমানিক ৮ হাজার ৫৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

মন্ত্রিসভা কমিটি বিউবো কর্তৃক কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় ৩০ মেগাওয়াট (এসি) সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ট্যারিফ অনুমোদনও দিয়েছে। ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হলে ২০ বছর মেয়াদে সাউথ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান ডিএইচ ইউরো হাইটেক কোম্পানি লিমিটেড এবং বাংলাদেশি কোম্পানি নিউটেক সোলার এনার্জি বিডি লিমিটেড কনসোর্টিয়ামকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১১ দশমিক ০৩ টাকা হিসাবে আনুমানিক ১ হাজার ৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

বিউবো কর্তৃক কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলায় ৫০ মেগাওয়াট (এসি) সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ট্যারিফ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেনা হলে ২০ বছর মেয়াদে জুলস পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানিকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১০ দশমিক ৯৪ টাকা হিসাবে আনুমানিক ১ হাজার ৭৭১ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

এ ছাড়া বিউবো কর্তৃক বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট (এসি) সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ট্যারিফ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হলে ২০ বছর মেয়াদে এশিয়ান ইনটেক পাওয়ার করপোরেশন এবং এক্সিয়া পাওয়ার হোল্ডিং বি.ভি কনসোর্টিয়ামকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১০ দশমিক ৯৯ টাকা হিসাবে আনুমানিক ৩ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৬৬১ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকার তেল, ডাল ও গম কিনছে সরকার। এর মধ্যে ৩৪৮ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকার গম কেনা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৪০ কোটি ১৬ লাখ ৬ হাজার টাকার মসুর ডাল এবং ১৭৩ কোটি ১১ লাখ টাকার ভোজ্যতেল কেনা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৬ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। এই মসুর ডাল কিনতে মোট খরচ হবে ৬২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০৩ টাকা ৮০ পয়সা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৭ কোটি ৮৮ লাখ ৬ হাজার টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০২ টাকা ৩৬ পয়সা। এই ডালও টিসিবির জন্য কেনা হবে।

মসুর ডালের পাশাপাশি তেল কেনার দুটি প্রস্তাব নিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড থেকে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৫৭ টাকা ২২ পয়সা। এই তেলও কেনা হবে টিসিবির জন্য। এ ছাড়া টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৬০ লাখ লিটার রাইস ব্রান অয়েল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মজুমদার প্রোডাক্টস এবং এমআরটি অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস বিডি লিমিটেড থেকে এই তেল কিনতে মোট ব্যয় হবে ৯৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতি লিটারের জন্য খরচ হবে ১৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। তিনি জানান, কাতার ও দেশি এক প্রতিষ্ঠান থেকে ২০৯ কোটি ৯৪ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫ টাকা দিয়ে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে কাতার থেকে ৩০ হাজার টন এবং দেশি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর