মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সংসদ নির্বাচন

চট্টগ্রামের তিন আসন নিয়ে ধূম্রজাল

আগেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে নৌকার দুই প্রার্থীকে, আরেকটি নিয়েও গুঞ্জন

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের তিন আসন নিয়ে ধূম্রজাল

জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে জোটগত সমীকরণ ও সুপ্রিম পার্টির সঙ্গে নির্বাচনি হিসাব-নিকাশে চট্টগ্রামের তিনটি আসন নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৫ ও ৮ আসনে আগেই নৌকার প্রার্থীকে থামিয়ে দিয়ে জাপাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনি হিসাব-নিকাশে চট্টগ্রাম-২ আসনে সুপ্রিম পার্টিকে সুযোগ দিতে নৌকার প্রার্থীকে থামিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে হতাশ, ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন। রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিকমাধ্যমে কয়েক দিন ধরে চাউর হয়েছে, চট্টগ্রাম-২ আসনের নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে দলের হাইকমান্ড থেকে শিগগিরই ঘোষণা আসবে। এ বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা এবং ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ করেছেন। সনিকে সরিয়ে এখানে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে আসা সুপ্রিম পার্টির সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দেবে। মাইজভান্ডারী দর্শনের প্রবক্তাদের উত্তরসূরি হিসেবে এ আসনে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং সুপ্রিম পার্টির সাইফুদ্দিনের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা আছে। সর্বশেষ দুই নির্বাচনে জোটের শরিক হিসেবে নজিবুল বশর এ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এমপি হলেও এবার দল চট্টগ্রামের প্রথম কোনো নারী হিসেবে সনিকে সংসদ নির্বাচনের টিকিট দেয়। সনিসহ আসনটিতে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সনি মনোনয়ন পেলেও আসনটি তরিকত ফেডারেশনকে ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জন আগে থেকেই ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নজিবুল আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি। এর মধ্যে গত বুধবার নজিবুলের ভাতিজা সাইফুদ্দিন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে রাজনৈতিক মাঠে নতুন আলোচনা শুরু হয়। সুপ্রিম পার্টিকে আওয়ামী লীগের সমর্থন দেওয়ার খবরকে গুজব দাবি করে গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশের পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান ও  ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরির সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ফোনে কথা বলেছেন বলেও রাজনৈতিক মাঠে চাউর হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলাপের কথা স্বীকার করেছেন শেখ আতাউর রহমান। তবে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। অন্যদিকে নাজিম উদ্দিন মুহুরি বলেন, ‘উনারা পরিস্থিতি জানতে চেয়েছিলেন। ঘোষণা হলে তো সবাই জানবে। আগে থেকে গুজবে কান না দেওয়াই উত্তম। তবে নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে এমন সিদ্ধান্তে নেতা-কর্মীরা হতাশ হবেন।’

এ বিষয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার বলেন, ‘আমি এখনো কিছুই জানি না। এমন কোনো সিদ্ধান্ত হলে আমাকে চিঠি দেওয়ার কথা। চিঠি দিলে জানতে পারব।’ একতারা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদও বলছেন, তিনিও এখনো শতভাগ নিশ্চিত নন। তবে দলের নেতারা যেহেতু বলছেন তাহলে বিষয়টি সত্যিও হতে পারে।

অন্যদিকে জাপাকে চট্টগ্রামে দুটি আসন দেওয়া হলেও এসব আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় জাপা প্রার্থীরা বেকায়দায় পড়েছেন। এর মধ্যে তিন দিন ধরে গুঞ্জন উঠছে, চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাপার আনিসুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে সোলায়মান আলমের জয়ের সুযোগ করে দিতে আওয়ামী ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দিয়ে সরে যেতে বলা হতে পারে।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন থেকে আবদুস সালামের সরে দাঁড়ানোর পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়েছিলেন। এরপর আওয়ামী ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী এবং তৃণমূল বিএনপির নাজিম উদ্দিনকে সমর্থন দিয়ে মাঠে আছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। মূলত আনিসের সঙ্গে এই দুই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এর মধ্যে নতুন করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জনে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে নোমান আল মাহমুদকে সরিয়ে জাপার সোলায়মান আলমকে মনোনয়ন দিলেও এ আসনে আওয়ামী ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালামের সঙ্গে সোলায়মান কতটা পেরে উঠবেন সেটা নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা আছে। এর মধ্যে কয়েকদিন ধরে ছালামকে সরিয়ে দেওয়ার খবরে টেনশনে আছেন তার সমর্থকরা। যদিও এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো খবর এখনো পর্যন্ত নেই।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর