বুধবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
এফএও-বিবিএসের প্রতিবেদন

খাবারের দাম বেড়েছে বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী খাবারের দাম ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। যেখানে একই সময় বাংলাদেশে খাবারের দাম ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র দেখা গেছে। এফএওর খাদ্য মূল্যসূচক ২০২৩ প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) খাদ্যের দাম ১০ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। আর সারা বছর (২০২২ এর তুলনায় ২০২৩-এ) ব্যবধানে কমেছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

ওই প্রতিবেদন বলছে, এ সময় প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে শুধু চিনি ছাড়া।

বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ে এফএওর প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, ২০২৩ সালে সংস্থাটির গড় খাদ্য মূল্যসূচক ছিল ১২৪ পয়েন্ট, যা ২০২২ সালের গড় সূচক মানের তুলনায় ১৯ দশমিক ৭ পয়েন্ট বা ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ কম। মাসভিত্তিক হিসাবে বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে আগের মাসের তুলনায় দেড় শতাংশ। এ সময় এফএওর খাদ্য মূল্যের সূচকমান ছিল ১১৮ দশমিক ৫ পয়েন্ট, যা আগের মাস নভেম্বরের তুলনায় ১ দশমিক ৮ পয়েন্ট কম। এ সময় গড় খাদ্য মূল্য ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ১০ দশমিক ১ শতাংশ কম।

গত বছর খাদ্যশস্যের দাম কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালে খাদ্যশস্যের গড় মূল্যসূচক ওঠে রেকর্ড উচ্চতায়। সেখান থেকে ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমে গত বছর শেষে খাদ্যশস্যের গড় সূচক মান দাঁড়িয়েছে ১৩০ দশমিক ৯ পয়েন্টে।

এফএওর তথ্যে মাংসের মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ডিসেম্বরে ১ শতাংশ কমেছে। আর সামগ্রিকভাবে গত বছর গড় মূল্য কমেছে সাড়ে ৩ শতাংশ। ডিসেম্বরে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল ডেইরি পণ্যের দাম। এ সময় নভেম্বরের তুলনায় দাম ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু ভিন্ন চিত্র ছিল পুরো বছরের হিসাবে। ২০২৩ সালে এসব পণ্যের গড় মূল্য আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে।

এদিকে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান (বিবিএসের তথ্য) বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে আগস্টে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কখনো ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশের কম ছিল না।

তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের শুরু থেকেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বছরের শেষ ভাগে এসে তা আরও বেড়েছে। সরকারের নানান পদক্ষেপেও খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যায়নি। বেড়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। গত আগস্ট মাসে হঠাৎ খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়, যা ছিল গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরের তিন মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম বেশি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে দাম কমে আর আমাদের দেশে অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারণে দাম কমে না। বিশ্ববাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে সেটা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করার একটি প্রবণতা থাকে আমাদের ব্যবসায়ীদের। আর দাম কমার ক্ষেত্রে হয় না। এতে সাধারণ মানুষ বিশ্ববাজারের মূল্যবৃদ্ধির মাশুল দিলেও দাম কমার সুফল পান না। আশা করি সরকার নিত্যপণ্যে নিয়ে যারা সিন্ডিকেট করছে তাদের কঠোর হস্তে দমন করবেন।

সর্বশেষ খবর