দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর খুলনার বিভিন্ন স্থানে পরাজিত আওয়ামী ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিজয়ী নৌকার কর্মী-সমর্থকরা এ হামলা করেছেন বলে অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। এতে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব-বিভেদ ছড়িয়ে পড়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম, মারধর, বাড়ি ভাঙচুর, জমি-দোকান দখলে হুমকিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনি কাজে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা হামলার ঘটনায় উসকানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে খুলনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, ‘ভোটে ফলাফল ঘোষণার পর আমার নির্বাচনি এজেন্ট সাবিনা বেগমকে মারধর ও বাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। পল্লীশ্রী কলেজ কেন্দ্রের এজেন্ট প্রিয়াংকা মন্ডল, তার স্বামী প্রকাশ মন্ডল ও শ্বশুর-শাশুড়িকে মারধর করা হয়। বাদুড়গাছায় নয়ন গাজী ও তার স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। সাহস ইউনিয়নের নৌকার সমর্থক ইলিয়াস ফকিরের নেতৃত্বে আমার সমর্থকদের পিটিয়ে জখম করা হয়। মাগুরখালি ইউনিয়নে নীতীশ মন্ডল, বিমল কৃষ্ণের বাড়ি-দোকান ভাঙচুর করা হয়। শোভনায় আব্বাস খান, দীনেশ ও সত্য মল্লিকের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ আকরাম হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার জন্যই এ ধরনের অপকর্ম চালানো হচ্ছে। বিজয়ী প্রার্থী তার বাহিনীকে নিবৃত্ত করছেন না। ফলে অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ একইভাবে খুলনা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, বিজয়ী নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা তেরখাদার ছাগলাদাহ ইউনিয়নে এসকেন্দ শেখকে কুপিয়ে জখম করে।
এ ছাড়া আজগড়ায় আবদুল কুদ্দুস, তার মেয়ে শিল্পীকে মারধর, রূপসার তিলকে দেব প্রসাদ কুন্ডুর মাথা ফাটিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ২২টি হামলা-মারধরের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘বিজয়ী নৌকার প্রার্থীর সমর্থক নব্য হাইব্রিডরা এখন পোড় খাওয়া অভিমানী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর ওপর হামলা করছে। এতে দল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী বলেন, ‘হামলার পেছনে যারা উসকানি দিচ্ছে তারাই মূলত দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ নির্বাচনে বিদ্রোহী ছিল না, স্বতন্ত্ররা কৌশলগত কারণে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু এখন স্বতন্ত্রদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করছে নব্য আওয়ামী লীগররা। যারা বংশপরম্পরায় দলের সঙ্গে জড়িত, তারা বিবাদে যুক্ত হননি। আমরা সংঘর্ষ চাই না। উসকানিমূলক আপত্তিকর কথাবার্তা বন্ধ করতে হবে।’