রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

‘অ্যানালগে’ ফিরেছে ‘ডিজিটাল সিটি’

রক্ষণাবেক্ষণ ও অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে সেবা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

‘অ্যানালগে’ ফিরেছে ‘ডিজিটাল সিটি’

দেশের প্রথম ডিজিটাল সিটির তকমা রয়েছে সিলেটের। নগরজুড়ে ফ্রি ওয়াইফাই ও সিসি ক্যামেরা বসানোর মাধ্যমে ডিজিটাল সিটি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সিলেটকে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ‘ডিজিটাল সিটি’ ফেরে ‘অ্যানালগে’। কাজ শেষে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল-বিসিসি’ প্রকল্প দুটি সিটি করপোরেশন ও মহানগর পুলিশে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়। কিন্তু প্রকল্পগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়নি সরকার। ফলে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগ। আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশির ভাগ সিসি ক্যামেরা দীর্ঘদিন ধরে বিকল।

২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি সিলেটকে ‘ডিজিটাল সিটি’ করার ঘোষণা দেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি। ওই প্রকল্পের আওতায় সিলেট নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকায় বসানো হয় ১৩০টি সিসি ক্যামেরা। এর মধ্যে ১০টি ‘ফেস রিকগনিশন ক্যামেরাও’ বসানো হয়। ১২৬ পয়েন্টে সংযোগ দেওয়া হয় ফ্রি ওয়াইফাই। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল-বিসিসি। বাস্তবায়নের পর সিসি ক্যামেরাগুলো সিলেট মহানগর পুলিশ ও ওয়াইফাই প্রকল্পটি সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিয়ে যায়। ২০২০ সালের ১০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটকে ‘ডিজিটাল সিটি’ আখ্যা দিয়ে পাবলিক ওয়াইফাইয়ের ‘ইউজার নেম’ রাখেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ আর পাসওয়ার্ড দেন জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’। এ প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের পর সুফল পেতে থাকে নগরবাসী। সরকারের এ উদ্যোগ দেশে-বিদেশে বেশ প্রশংসিতও হয়। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে লোকজন ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সুযোগ পায়। এ ছাড়া নগরজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর ফলে কমে আসে অপরাধও। চুরি, ছিনতাই ও সংঘর্ষ ঘটলে পুলিশ সহজেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে ছিনতাইয়ের পরপর পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রকল্প দুটি নাগরিক সেবা ও নিরাপত্তা বাড়ালেও খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। প্রকল্প দুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের জন্য সরকার থেকে কোনো ধরনের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি মহানগর পুলিশ ও সিটি করপোরেশনকে। ফলে ইন্টারনেট বিল পরিশোধ করতে না পারা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েক মাসের মধ্যে ফ্রি ওয়াইফাই সেবা বন্ধ হয়ে যায়। সেবাটি চালু রাখতে প্রতি বছর ব্যান্ডউইথ বাবদ ৪২ লাখ টাকা ও ব্যবস্থাপনা বাবদ সমপরিমাণ অর্থের প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে সেবাটি চালু রাখতে অনাগ্রহ দেখায়। ফলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত ৩০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি এখন সিলেট নগরবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। এদিকে একইভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নগরীর বেশির ভাগ সিসি ক্যামেরা বিকল হয়ে পড়ে। নগরীর ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ১৩০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়।

 প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ক্যামেরাগুলো সিলেট মহানগর পুলিশকে (এসএমপি) বুঝিয়ে দিয়ে যায় বিসিসি। এর পর থেকে ওই সিসি ক্যামেরাগুলোয় চোখ রেখে পুলিশ নগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে আসছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে ক্যামেরাগুলো বিকল হতে থাকলে বিপাকে পড়ে এসএমপি। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় তারা ক্যামেরাগুলো মেরামতও করতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত তারা দ্বারস্থ হয়েছে সিটি করপোরেশনের।

এ প্রসঙ্গে এসএমপি কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান জানান, সিসি ক্যামেরাগুলো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সহজে অপরাধী শনাক্ত করা যায়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্যামেরা এখন বিকল। এগুলো মেরামত করে সচল করার জন্য সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করা হয়েছে। ক্যামেরা সচলে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, বরাদ্দ না থাকায় ফ্রি ওয়াইফাই সেবা চালু রাখা সম্ভব হয়নি। সিসি ক্যামেরাগুলো সচল রাখতে এসএমপির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ক্যামেরাগুলো সচল করতে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে ক্যামেরাগুলো সচল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর