রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাণিজ্য মেলায় উপচে পড়া ভিড় ছাড়ে প্রতারণার অভিযোগ

জাহাঙ্গীর আলম হানিফ, রূপগঞ্জ

বাণিজ্য মেলায় উপচে পড়া ভিড় ছাড়ে প্রতারণার অভিযোগ

২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ক্রেতাদের ভিড়। ছবিটি গতকাল তোলা -বাংলাদশ প্রতিদিন

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)- এর নতুন শহর প্রকল্পের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর। এ মেলা ঘিরে সব রকম পণ্যের স্টল আর প্যাভিলিয়নে চলছে ছাড় ঘোষণার হিড়িক। তবে এ ছাড় নিয়ে ব্যবসায়ীরা আশাবাদী হলেও ক্রেতাদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

১৪তম দিন গতকাল বিকালে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, নিত্য পণ্য ছাড়াও ইলেকট্রনিক পণ্যের পাশাপাশি নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের ফার্নিচারের সমাহার। এসব প্রতিষ্ঠানে কোনোটায় ৩৫ ভাগ, কোনোটায় ১২ ভাগ আবার কোনোটায় ১০ ভাগ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা সংবলিত স্টিকার ঝুলছে। এসব পণ্যের ছাড়ের আশায় দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন তাদের স্টলে। অনেকে ক্রয় করছেন আবার চাহিদামতো ডিজাইন ও ধরনের দিক বিবেচনায় অর্ডার করছেন কেউ কেউ। কথা হয় যমুনা ইলেকট্রনিক পণ্যের প্যাভিলিয়ন ম্যানেজার হারুন উর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় আমরা আমাদের পণ্যে ৩৫ ভাগ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছি। নতুন মডেলের বাইক এসেছে, যাতে ১২ ভাগ ছাড় দিচ্ছি। এ ছাড় দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো আমাদের পণ্যের প্রচার বাড়ানো। প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ড প্রমোটার ইতি আক্তার বলেন, আমাদের পণ্যগুলো বিক্রির চেয়ে প্রদর্শনীতেই প্রাধান্য দিচ্ছি। তবে বিক্রি ভালো হচ্ছে। আমরা আশাবাদী বেশি বিক্রির রেকর্ড আমরাই করব।

কথা হয় দেশীয় পণ্যের স্লোগান দেওয়া প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের সহকারী প্রধান (কর্পোরেট অ্যান্ড সেল) আনোয়ার কবীর কাননের সঙ্গে। তিনি বলেন, শীতের মেলা শেষে গরমের দিন চলে আসছে। লোকজন আমাদের কাছ থেকে এবার ফ্যান ও এসিই বেশি ক্রয় করছেন। তা ছাড়া আমরা ছাড় দেওয়া শুরু করেছি। ফলে ভালো সারা পাচ্ছি। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, একইভাবে নিত্যপণ্যের স্টলগুলোতেও কোথাও ২৫ ভাগ, কোথাও ১৫ ভাগ ছাড়ের হাকডাক করা হচ্ছে। তবে এসব স্টলের পণ্যের ছাড় নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ ভয়ংকর।

১৪তম দিনে সরকারি ছুটির দিন শনিবার হওয়ায় দুপুর থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে মেলায়।

তবে মেলার বাইরে পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে করা হয়েছে অস্থায়ী খাবার হোটেলসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে। এসব দোকানের পরিবেশ যাইহোক, মেলার ভিতরে থাকা খাবার হোটেল থেকে কমদামে বিক্রি করছে। আর তাই দর্শনার্থীদের একটা অংশ খাবার খাচ্ছেন মেলার বাইরে থেকে। মেলায় প্রবেশের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে করা হয়েছে শতাধিক খাবার হোটেল। পাশাপাশি খোলা খাবার বিক্রির জন্য রয়েছে ভাসমান হকার। ভিতরের সবগুলো খাবার স্টলের তুলনামূলক মূল্য হিসেবে দেখা যায়, প্রায় একই ধরনের খাবার মেলার বাইরের দোকানের চেয়ে ভিতরের স্টলে দ্বিগুণ থেকে ৩ গুণ দাম বেশি।

মধুখালী এলাকার বাসিন্দা ইমামউদ্দীন বলেন, আমাদের এলাকায় মেলা হচ্ছে, এটা গর্বের বিষয়। আমরা বেশিরভাগ মানুষ গরিব। ভেবেছিলাম মেলায় কমদামে নিজেদের সংসারের আসবাব বা প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে পারব। বাস্তবে দেখলাম বাইরের বাজারে যেমন দাম তার চেয়ে দিগুণ দাম এখানে। আবার ছাড়ের কথা বললেও এ ছাড় শুধু স্টিকারে আর তাদের মুখে মুখে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মেলার পরিচালক ও ইপিবি সচিব বিবেক সরকার বলেন, মেলার ব্যবসায়ীরা কি ধরনের ছাড় দিচ্ছে বা না দিচ্ছে তা আমার দেখার বিষয় না। কোনো অভিযোগ থাকলে মেলায় ভোক্তা অধিকার রয়েছে। সেখানে অভিযোগ করলে আইনি সহায়তা পাবেন।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের নিয়োজিত কর্মকর্তা বিকাল চন্দ্র দাশ বলেন, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে ছাড় নিয়ে কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

সূত্র জানায়, এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ১ জানুয়ারির পরিবর্তে ২১ জানুয়ারি শুরু হওয়ায় প্রথম দিকে কিছুটা দর্শনার্থী কম ছিল। তবে মেলার ২য় সপ্তাহ থেকে বাড়তে থাকে ক্রেতা ও দর্শনার্থী। এতদিন ব্যবসায়ীরা বিক্রি কমের কথা জানালেও আজ তারা বলেছেন বিক্রি বাড়ার কথা।

উল্লেখ্য যে, গত ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন পূর্বাচলের স্থায়ী ভ্যানুতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ব্যবসায়ীরা আশায় রয়েছেন সরকারি ছুটির দিনের।

সূত্রমতে, এবারের মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩০টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন অংশ নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ১৩টি বিদেশি স্টল। এ ছাড়া স্থানীয় উদ্যোক্তারাও তাঁদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির স্টল সাজাচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে এ মেলায় এবার ৫০০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাবেন বলে জানিয়েছেন ইপিবি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর