রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নাম বদলে চলে বন্ধ হওয়া ক্লিনিক

লক্ষ্মীপুর এলাকায় ২২ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধভাবে বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

নাম বদলে চলে বন্ধ হওয়া ক্লিনিক

রাজশাহী মহানগরীর ঘোষপাড়া মোড়ের কাছে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের বিপরীতে দ্বিতল একটি বাসভবনের নিচতলায় হেলথ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রকাশ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি চলছে অবৈধভাবে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. সামিউল। তিনি জানান, অনুমোদন না থাকার পরও শরিফুল ইসলামের কাছ থেকে তিনি প্রতিষ্ঠানটি কিনে পরিচালনা করছেন। নগরীর লক্ষ্মীপুর জিপিও পোস্ট অফিসের বিপরীতে মডার্ন ক্লিনিক, কৃষি ব্যাংকের ১০ তলা ভবনের বিপরীতে সেফ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ প্রতিষ্ঠান দুটিও বছরের পর বছর চলছে অনুমোদন ছাড়াই। আর এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত রাজশাহী সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়। স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্সে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের ব্যবসা করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাওয়া তথ্যমতে, রাজশাহীর ক্লিনিকপাড়া হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মীপুর এলাকায়ই ২২টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধভাবে বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে থাকলেও স্থানীয় সিভিল সার্জন নাকি তাদের খুঁজেই পান না। অভিযোগ পেলেই শুধু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য বিভাগ। দু-একটি সিলগালা করা হলে নাম পাল্টে আবারও চালু হয় একই ব্যবসা। রোগী, স্বজনসহ বৈধ ব্যবসায়ীদের দাবি, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারিত হচ্ছে রোগী ও স্বজনরা। তবে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবি, অন্যান্য জেলার চেয়ে রাজশাহীতে অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের সংখ্যা কম। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় অনুমোদিত প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ ব্লাডব্যাংক ২ হাজার ৮৩টি। এর মধ্যে ক্লিনিক ৭৭৭, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১ হাজার ২৯০ ও ব্লাডব্যাংক ১৬টি। রাজশাহী জেলায় প্রাইভেট ক্লিনিক ১২১, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২২৬, ব্লাডব্যাংক ৪টি। বগুড়ায় ক্লিনিক ১৭২, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২১৭, ব্লাডব্যাংক ৫টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্লিনিক ৬৫, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১০৬, ব্লাডব্যাংক ১টি। জয়পুরহাটে ক্লিনিক ২৪, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৬০টি। কোনো ব্লাডব্যাংক নেই।    নওগাঁয় ক্লিনিক ৯০, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৩৭, ব্লাডব্যাংক ১টি। নাটোরে ক্লিনিক ৮১, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৫১, ব্লাডব্যাংক ২টি। পাবনায় ক্লিনিক ১২৪, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২১০টি। ব্লাডব্যাংক নেই। সিরাজগঞ্জে       ক্লিনিক ১০০, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৮৩, ব্লাডব্যাংক ৩টি।

রাজশাহী প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘লাইসেন্স প্রক্রিয়াটা খুবই জটিল। ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার করতে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। এমনকি লাইসেন্স পেতে যেসব শর্ত দেওয়া আছে, তা মানাও সব ক্ষেত্রে সম্ভব না। যেমন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিকের ভবনে আবাসিকভাবে বসবাস বা মার্কেট থাকা যাবে না। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান চলে ভাড়া বাড়িতে। বাড়িওয়ালা এ শর্ত মানেন না। পরিবেশ অধিদফতর ও নারকোটিকসের লাইসেন্স পেতেও বেগ পেতে হয়। তা ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেওয়া হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স।’ রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুকের দাবি, অবৈধ ও অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া।

অভিযানে বন্ধ যেসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদন না পেয়ে অন্য নামে ব্যবসা শুরু করে, এসব ধরা কঠিন। তবে খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর