বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

চাঁদাবাজির নতুন নাম সাপ্লাই

বাড়তি দামে নির্মাণ সামগ্রী না কিনলে বন্ধ করে দেওয়া হয় কাজ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দিন কয়েক আগে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও শমশেরপাড়া এলাকায় নতুন ঘর করতে আসেন এক প্রবাসী। ঘর তৈরির জন্য আনেন ইট, বালু ও সিমেন্টসহ নানান উপকরণ। কিন্তু কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক যুবক নির্মাণ শ্রমিকদের মারধর করে বন্ধ করে দেয় কাজ। পরে ইট, বালু, সিমেন্ট ওই যুবকদের কাছ থেকে নেওয়ার ‘আবদার’ করে কাজ শুরুর প্রস্তাব দেয়। এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে তাদের কাছ থেকে নির্মাণসামগ্রী কিনে কাজ শুরু করতে বাধ্য হন ওই প্রবাসী। শুধু ওই ব্যক্তি নন চট্টগ্রামজুড়েই চলছে ‘সাপ্লাই’ নামে নতুন ধরনের চাঁদাবাজি। সাপ্লাই চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘কারও কাছ থেকে ইট, বালু, রড, সিমেন্ট কিনতে বাধ্য করা অবশ্যই অপরাধ। তবে এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আমরা পাইনি। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে সঙ্গে সঙ্গে চাঁদাবাজির মামলা গ্রহণ করা হবে।’ সিএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার স্পিনা রানী প্রামাণিক বলেন, ‘সব ধরনের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সিএমপির অবস্থান জিরো ট্রলারেন্স। প্রত্যেক থানার প্রতি আমাদের নির্দেশনা রয়েছে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের শক্ত হস্তে দমন করার।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার এলাকায় এলাকায় গড়ে উঠেছে ‘সাপ্লাই সিন্ডিকেট’। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। কথিত বড় ভাই ও রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। তারা অন্যান্য অপরাধ কর্মকান্ডের পাশাপাশি রড়, ইট, বালু সিমেন্ট সরবরাহেও জড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে তাদের টার্গেট থাকে প্রবাসী, এলাকায় নতুন আসা লোকজন ও নিরীহ লোকজন। টার্গেট করা ব্যক্তি নির্মাণকাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে সাপ্লাই সিন্ডিকেটের সদস্যরা শ্রমিকদের মারধর করে কাজ বন্ধ করে দেয়। তাদের কাছ থেকে নির্মাণসামগ্রী নেওয়ার আশ্বাস পেলেই কেবল শুরু করতে পারেন নির্মাণকাজ। নির্মাণসামগ্রী দেওয়ার জন্য ভয়ংকর প্রতারণার আশ্রয় নেয় সাপ্লাই সিন্ডিকেট। তারা দাম নেয় বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি। কিন্তু পরিমাণে দেয় কম। তাদের এ অপকর্মের প্রতিবাদ করতে পারে না হেনস্তা হওয়ার ভয়ে। নতুন ধরনের চাঁদাবাজির বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম জেলার কয়েকটি উপজেলার বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্যের সঙ্গে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- বালু, ইট ও সিমেন্ট সাপ্লাই দেওয়ার নামে চাঁদাবাজি এলাকায় এলাকায় ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে মারধর, নির্মাণসামগ্রী লুট করাসহ নানান ঘটনা ঘটে। অনেকে মুখ বুঁজে তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়। অনেক প্রবাসী আবার কাজ করাই বন্ধ করে দিয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর