জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ছয়জন যুবক দালালের খপ্পরে পড়ে জাল ভিসা নিয়ে শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা খেয়ে সেখান থেকে সরাসরি দালালের বাড়িতে এসে ছয় দিন ধরে অবস্থান করছেন। তাদের কথা, ‘আর বিদেশ নয়, দেওয়া টাকা ফেরত নিয়ে তারা নিজ বাড়িতে ফিরতে চান। তা না হলে দালালের বাড়িতেই তারা সবাই শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মাহুতি দেবেন।’ গতকাল সকালে উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামে দালালের বাড়িতে গিয়ে ওই ছয় যুবকের অবস্থান দেখা গেছে। তারা হলেন- উপজেলার পাঁচগ্রামের আতিকুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, আবদুল ওয়াদুদ, আলামিন তালুকদার, মোলামগাড়ীহাটের মেহেদী হাসান, জিন্দারপুর গ্রামের আবু তাহের। অবস্থানরত যুবক, দালালের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিন্দারপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে দালাল সুলতান মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান। এলাকায় তাকে মাবুদ নামে সবাই চেনেন। সাড়ে তিন বছর আগে একই এলাকার ছয়জন যুবক একসঙ্গে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দালাল মাবুদের সঙ্গে ৩৩ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তির পুরো টাকা তারা পরিশোধ করেছেন। তখন থেকেই কালক্ষেপণ করেন মাবুদ। ছয় মাস আগে মালয়েশিয়া নয়, তাজিকিস্তানে পাঠানোর কথা বললে রাজি হন যুবকরা। দেরিতে হলেও চলতি বছরের ১৮ মার্চ তাদেরকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাজিকিস্তানে পাঠানোর নামে ঢাকায় নেওয়া হয়। ২০ মার্চ রাতে টিকিটসহ কাগজপত্র হাতে পেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হন ওই ছয় যুবক। কিন্তু তারা এয়ারপোর্ট চেকিংয়ে গিয়ে জানতে পারেন ম্যানপাওয়ার, ভিসা, বিএমইটি স্মার্ট কার্ড জালিয়াতি করে তাদের ভুয়া কাগজপত্র দিয়েছেন দালাল মাবুদ। শুধু বিমানের টিকিট ছিল আসল। তখন বাধ্য হয়ে এয়ারপোর্ট থেকে তাদেরকে ফেরত আসতে হয়। তাই তারা নিজ বাড়িতে না গিয়ে দালাল সুলতান মাহমুদের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

অবস্থানরত যুবক আতিকুল ইসলাম বলেন, জমি বন্ধক রেখে দালাল মাবুদকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে আজ বড় বিপদে পড়েছি। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ছয় দিন ধরে এ বাড়িতে অবস্থান করছি। পুলিশ নয়, আমরা নিজেরাই এর সমাধান চাই। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত এই বাড়ি থেকে যাব না। কপালে যা আছে তা হবেই।

এখানেই শেষ নয়, ছয় মাস আগে একই উপজেলার আতাহার গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে আমিরুল ইসলাম, জিন্দাপুর গ্রামের মোশারফের ছেলে মোহসিন আলী, বেলগড়িয়া গ্রামের ফরিদুলের ছেলে ফয়সাল, মহেশপুর গ্রামের ইউনুসের ছেলে রিমন, পাঁচগ্রামের মৃত মজিদের ছেলে মোস্তফাসহ আরও অনেককেই মালয়েশিয়াতে একই কৌশলে পাঠিয়েছে দালাল মাবুদ। তারা বর্তমানে কাজ না পেয়ে মাবুদের লোকজনদের কাছে বন্দি অবস্থায় মালয়েশিয়াতে জীবনযাপন করছেন।

পালিয়ে যাওয়া আগে দালাল সুলতান মাহমুদ ওরফে মাবুদ বলেছিলেন, আমি যে এজেন্সির মাধ্যমে তাদেরকে পাঠাচ্ছি মূলত তারাই এসব ভুয়া কাগজপত্র প্রস্তুত করেছে। তারা যে ভুয়া কাগজপত্র করেছে তার কিছুই জানি না। টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আমি তাদের কাছে সময় চেয়েছি। তাদের টাকার ব্যবস্থা করছি।

ছয় মাস আগে মালয়েশিয়াতে যাদেরকে পাঠিয়েছেন তারা এখন বন্দি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ পায়নি, তার হেফাজতেই তারা রয়েছেন। খরচ যা লাগছে আমিই দিচ্ছি। কয়েক দিনের মধ্যে তাদেরও ব্যবস্থা হবে।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, ৯৯৯ এ কল পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতারিত যুবকদের অভিযোগ দিতে ডাকা হয়েছিল কিন্তু তারা অভিযোগ দিতে নারাজ। মাবুদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।