বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

বর্ষা মৌসুম নিয়ে শঙ্কা

এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রথম ভারী বর্ষণ হলো। প্রথম বৃষ্টিতেই নগরের অনেক জায়গায় বুক, কোমর ও হাঁটুসমান পানি হয়। তৈরি হয় চরম জলাবদ্ধতা। গ্রীষ্ম মৌসুমের হঠাৎ ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষকে। সামনে বর্ষা মৌসুমে আরও অধিক মাত্রায় ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তখন জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন নগরবাসী। আবহাওয়া অফিস গত সোমবার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। সরেজমিন দেখা যায়, গত সোমবার বিকালের মুষলধারে বৃষ্টিতে নগরে তিনপুলের মাথায় বুকসমান পানি জমে। মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, প্রবর্তক মোড়ে পানি জমে কোমরসমান। নতুন করে পানি জমে নিউমার্কেট এলাকায়। তাছাড়া, নগরের হালিশহর, ইপিজেড, সল্টগোলা, বন্দর, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি, ২ নম্বর গেট, চকবাজার, বাকলিয়া পাঁচলাইশসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায়। জানা যায়, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনসট্রাকশন ব্রিগেড। বর্তমানে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ ভৌতিক কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীন নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচটি স্লুইস গেট, ৩৬টি খালের মধ্যে ২৫টির উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ প্রায় শেষ।

মেগা প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, গত সোমবারের বৃষ্টিতে বেশি পানি জমেছে এমন ১৩টি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছি। এসব পয়েন্টে কিছু কাজ হয়েছে, কিছু কাজ চলমান। তবে এবার পানি নগরের অভ্যন্তরীণ এলাকায় জমেছে। কারণ অনেক নালা-ড্রেন ও খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারেনি। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের অধীন জলাবদ্ধতা-সংশ্লিষ্ট খাল-নালা-নদর্মাগুলোর মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশের কাজ চলছে, এর বাইরের কাজগুলো সম্পন্ন করা ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। তাছাড়া, প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার পরই এর আশানুরূপ সুফল মিলবে। জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে আসবে।  

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোওয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে। কিন্তু ফলাফল আসবে এমন কাজগুলো শেষ হয়নি। বর্তমানে নগরের অভ্যন্তরীণ এলাকার খাল ও নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরাট হয়ে আছে। ফলে গত সোমবারের বৃষ্টিতে নগরের অভ্যন্তরীণ এলাকায় পানি জমলেও বাইরের এলাকায় জমেনি। তাই নগরের খাল ও নালা-নর্দমাগুলো পরিষ্কার করা ছাড়া জলাবদ্ধতা ঠেকানো নিরসন করা হবে না।

চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরে নালা ড্রেন আছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে মেগা প্রকল্পের অধীন ৩০২ কিলোমিটার ড্রেন ও নালার কাজ শেষ। কিন্তু বাকি ১৩০০ কিমি নালা-ড্রেন পরিষ্কারের দায়িত্ব চসিকের। চসিক গত বছর প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নালা-ড্রেন পরিষ্কারের কথা বলেছিল। এরপরও এখন নালা ড্রেনগুলোয় আবর্জনা জমে পানি চলাচল ব্যাহত করছে। অন্যদিকে, নগরে বর্তমানে খাল আছে ৫৭টি। এর মধ্যে প্রকল্পের অধীন সংস্কার করা হচ্ছে ৩৬টি। বাকি ২১টি খাল এখনো সংস্কারের বাইরে। তবে খালগুলো নিয়ে চসিক প্রকল্প গ্রহণ করতে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। কিন্তু প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১টি খাল এবং এক হাজার ৩০০ কিমি নালা-ড্রেনের অবস্থা বেহাল। ফলে পানি দ্রুত প্রবাহিত হচ্ছে না। দ্রুতই জমে যাচ্ছে পানি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর