সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
শেরপুর-ময়মনসিংহ বিকল্প মহাসড়ক

খুলছে যোগাযোগের নতুন দুয়ার

♦ দূরত্ব কমবে ২০ কি.মি ♦ চরাঞ্চলবাসীর জীবন-জীবিকায় আসবে নতুন গতি ♦ স্থাপিত হবে ভারী-মাঝারি শিল্প ♦ বাড়বে কর্মসংস্থান ♦ কৃষিজ পণ্য সহজেই পৌঁছে যাবে ময়মনসিংহ-ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে

মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর

খুলছে যোগাযোগের নতুন দুয়ার

শেরপুরের উপশহর কানাশাখোলা থেকে শুরু হয়ে ভীমগঞ্জ-নারায়ণখোলা-রামভদ্রপুর-পরাণগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহ মহানগরের রহমতপুরের সঙ্গে মিলিত হবে নতুন মহাসড়ক। এই সড়কে শেরপুর-ময়মনসিংহের দূরত্ব হবে ৪৯ কি.মি.। বর্তমানে শেরপুর-ময়মনসিংহ যোগাযোগের প্রধান সড়ক হলো শেরপুর-নকলা-ফুলপুর-ময়মনসিংহ। এই সড়কে দুই জেলার দূরত্ব ৬৯ কি.মি.। নতুন সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হলে দূরত্ব কমবে ২০ কি.মি.। এত বৃহৎ বাজেটের দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্প এই অঞ্চলে এটিই প্রথম। সরকারের এই উদ্যোগ সফল হলে অবহেলিত বৃহত্তর অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। একমাত্র সড়ক যোগাযোগ সর্বস্ব^ জেলা শেরপুরের সঙ্গে ময়মনসিংহের এই সড়কে বদলে যাবে যোগাযোগব্যবস্থা। সীমান্তবর্তী প্রান্তিক এই জেলার সঙ্গে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের দ্রুত যোগাযোগ, অর্থনীতি, বাণিজ্যসহ সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই এই মহাসড়কটি করা হচ্ছে- দাবি সরকারের। এই সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দুয়ারের উন্মোচন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় জনসাধারণ।

জানা গেছে, গুরুত্ব ও দূরত্ব বিবেচনায় এই সড়কটি নির্মাণের পথ সৃষ্টি করে ব্রিটিশ সরকার। তৎকালীন সরকার শেরপুর থেকে চন্দকোনার চরবসন্তি পর্যন্ত মহাসড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়। আদালতের নির্দেশে ১৯৫২/৫৩ সালে জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়। বর্তমান সরকার নতুন এই যোগাযোগের বাস্তব রূপ দিতে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বছর চারেক আগে। কাজ শুরুর দুরন্ত সূচনা করে গত বছরের ২২ আগস্ট। ময়মনসিংহের সঙ্গে যোগাযোগের কাক্সিক্ষত এই সড়কটি কানাশাখোলার আগের মহাসড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শেরপুরের গ্রামীণ জনপদ দিয়ে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে রহমতপুরে পৌঁছবে। ব্রহ্মপুত্রে সেতু নির্মাণে বড় বাধা ছিল। ৩৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহের পরাণগঞ্জ-রহমতপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ ও রেললাইনের ওপর দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে ১ হাজার ৪৭১ মিটারের একটি বিশাল দৃষ্টিনন্দন সেতু। নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যে কাজ শেষ করতে সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব শেরপুর ও ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথের। কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগবে দুই বছরের অধিক। রাস্তার দৈর্ঘ্য হবে ৪৪.৯০৬ কি.মি., প্রস্থ ৩৩.৭৮ ফুট। করতে হবে অন্তত বড় আটটি সেতু ও শতাধিক ছোট মাঝারি কালভার্ড। সরকারের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই মহাসড়কটি নির্মাণ হচ্ছে মূলত শেরপুর-ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবহেলিত বিশাল চরাঞ্চলকে ঘিরে। এতে পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলবাসীর জীবন-জীবিকায় নতুন গতি আনতেই এই বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই মহাসড়ক ঘিরে চরের বুকে স্থাপিত হবে নতুন নতুন ভারী-মাঝারি শিল্প। বাড়বে কর্মসংস্থান, মাথাপিছু আয়। চরাঞ্চলের বিশাল উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য সহজেই পৌঁছে যাবে ময়মনসিংহ-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই মহাসড়ককে ঘিরে শেরপুর কুড়িগ্রাম জেলাসহ বিশাল এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগসহ জীবন ব্যবস্থায় গতি আসবে। শেরপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সরকারের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিশাল জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তন হবে। ময়মনসিংহের সঙ্গে দূরত্ব কমে যাওয়ায় বৃহৎ শিল্প হতে পারে। শিক্ষার নগরী ময়মনসিংহ কাছে চলে আসায় মানুষজন কম খরচে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবে। সরকারের স্থানীয় সড়ক বিভাগ এই মেগা প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর। সরকারের এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে শেরপুর সড়ক বিভাগ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং কাজের শতকরা ৩৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর