মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

উচ্চ ফলনশীল ধানের সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা

♦ জাত পৃথক না করেই চাল করছে অটোরাইস মিলগুলো ♦ কোন জাতের ধানের চাল খাচ্ছেন জানেন না ভোক্তারা

নজরুল মৃধা, রংপুর

অটোরাইস মিলগুলো ধানের জাত পৃথক না করেই চাল করছে। তারা সব প্রজাতির ধান একসঙ্গে ভেঙে চাল করছে। এতে ধানের গুণগতমান নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোটা-চিকন ধানের গুণগত রকম ভেদ থাকলেও পৃথকভাবে ধান না ভাঙানোয় ভোক্তারা ১২ মিশেলি ধানের চাল খাচ্ছেন। কোন জাতের ধানের চাল খাচ্ছেন ভোক্তারা তা জানেন না। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির ধান আবিষ্কার করলেও পৃথকভাবে ধান থেকে চাল করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার মাঠেই দাফন হচ্ছে। সাধারণ জনগণ উচ্চফলনশীল, গুণগতমানের ধানের মাড়াই করা চাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভোক্তারা বুঝতেই পারছে না তারা কোন জাতের ধানের চাল খাচ্ছেন। এমন অভিযোগ ভোক্তাদের। এ ছাড়া সম্প্রতি জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনে চালের বস্তায় জাত লেখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। সেই নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না।  কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে দেড় শতাধিক প্রজাতির ধান আবাদ হয় বিভিন্ন মৌসুমে। বর্তমানে এই অঞ্চলে উৎপাদিত ধানের ৬০ শতাংশই হাইব্রিড জাতীয়। অথচ বাজারে চাল কিনতে গেলে ব্রি-২৮, পাইজাম, নাজিরশাইল, মিনিকেটসহ আরও দু-একটি জাতের ছাড়া অন্য প্রকার ধানের চালের নাম শোনা যায় না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান ম ল বলেন, অটোরাইস মিল মালিকরা জাত পৃথক না করে ধান থেকে চাল তৈরি করছে।ধান থেকে যখন চাল করা হয় তখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮-১০ প্রজাতির ধান একত্র করে মেশিনে দিয়ে চাল করা হচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অটোরাইস মিলগুলোতে যখন ধান ভাঙানো হয় তখন ঘর্ষণে এমনিতেই ধানের গুণগতমান অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। আটোরাইস মিল মালিকরা ধানের মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গ্রাম-গঞ্জে দালাল, ফরিয়া নিয়োগ করে। এরা মাঠপর্যায়ের কৃষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ধান সংগ্রহ করছে ঠিকই। কিন্তু জাত পৃথকভাবে না ভাঙানোর ফলে অধিক পুষ্টিসমৃৃদ্ধ ধানের চাল থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। ১২ মিশেলি ধানের চাল একদিকে যেমন সঠিক মান ধরে রাখতে পারছে না অপরদিকে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে না। জানা গেছে, একটি অটোরাইস মিলে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ মেট্রিক টন ধান লাগে। এর মধ্যে শুধু চিকন ও মোটা বাছাই করা হয়। কিন্তু কোনটা কোন জাতের তা পার্থক্য করা হয় না।

 ফলে কৃষি গবেষণার আবিষ্কৃত ধানের গুণগতমানের চালের পার্থক্য বোঝা যাচ্ছে না। একসঙ্গে কয়েক প্রজাতির ধান থেকে চাল করায় সরকারের খাদ্যনিরাপত্তার পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে জনগণ কোন ধানের চাল খাচ্ছে এটা বুঝতে পারছে না।

 

সর্বশেষ খবর