শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

তিস্তার পানি বাড়ায় আতঙ্ক

চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিতে সিলেটে বন্যার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও সিলেট

তিস্তার পানি বাড়ায় আতঙ্ক

বর্ষা ঋতু দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে তিস্তার পানি। শুকনো মৌসুমে তিস্তার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এবং ভাঙনপ্রবণ নদীর তীর সংস্কার না হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছে নদীপাড়ের তিন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাঁধ ও তীর মেরামতের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী, গঙ্গাচড়া সদর এবং গজঘণ্টা ইউনিয়ন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গার্নারপাড়, বিনবিনার চর, শঙ্করদহ, পশ্চিম ইচলি, পূর্ব ইচলি, বাঘেরহাট, চর ঈশ্বরপুর, জয়রাম মৌজা, মর্নেয়া। কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, নিচপাড়া, তালুকশাহবাজ, ঢুসমারাম হরিশ্বর। পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়া, দৌলত খাঁ, কান্দিরা, শিবদেবচর, চর ছাওলা, কামারের হাট, রামসিং, জুয়ানের চর, তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চর তাম্বুলপুর, নামাচর ও চর রহমত।

গঙ্গাচড়া উপজেলার গান্নারপাড় বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এবারের বর্ষায় ওই বাঁধের অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকির মুখে। এ ছাড়া মর্ণেয়া ইউনিয়নের বিববিনার চর, লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার প্রবল ভাঙন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ওইসব এলাকার নদীর তীর এবং বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় আসন্ন বন্যায় শত শত মানুষের বসতভিাটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গান্নারপাড় গ্রামের অমিনুর রহমান বলেন, গান্নারপাড়ের বাঁধ সংস্কার না করায় মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছেন তারা। নদীভাঙন শুরু হলে ঘর সরানোর সময় পর্যন্ত পাওয়া যায় না।

কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আনছার আলী বলেন, বর্ষার আগে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরামত করলে ভাঙন কিছুটা রোধ করা সম্ভব হতো।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তিস্তা নদীতে পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবছর ১ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫১ দশমিক ২১ সেন্টিমিটার। এক দিন আগে ছিল ৫১ সেন্টিমিটার। কাউনিয়া পয়েন্টে ছিল ২৭ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার, এক দিন আগে ছিল ২৭ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার ডানতীর রক্ষা বাঁধের কিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলার গার্নারপাড় এবং মর্নেয়ায় বাঁধের কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া কাউনিয়া উপজেলার গদাই ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে কিছু এলাকা ভাঙনপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাঁধ ও নদীর তীর সংস্কারে বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিতে সিলেটে বন্যার শঙ্কা : বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জির। সিলেট সীমান্তের ওপারেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। চেরাপুঞ্জিও সিলেটের সীমান্ত লাগোয়া। তাই চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হলে বাড়তে থাকে সিলেটের নদ-নদীর পানি। দেখা দেয় বন্যা। চলতি মাসের শুরুতে চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের কারণে সিলেটে বন্যা হয়েছিল। সেই পানি নামতে না নামতে ফের বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত দুই দিন ধরে চেরাপুঞ্জিতে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটের নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট ও চেরাপুঞ্জি মিলে ৫৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বৃষ্টিপাত না থামলে দু-এক দিনের মধ্যে সিলেটে ফের বন্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যা হলে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর