বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

এলএনজির সরবরাহ কমায় তীব্র গ্যাস সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মহেশখালী ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ কমে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমেছে। এতদিন একটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গড়ে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল। সরবরাহ কমে যাওয়ায় সারা দেশে গ্যাসের তীব্র সংকটে শিল্প-কারখানার উৎপাদন অনেকটাই থমকে গেছে। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের দীর্ঘ জট দেখা গেছে। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ঢাকার বাইরে বেড়েছে লোডশেডিং। পাশাপাশি গ্যাস সংকটে আবাসিক গ্রাহকরাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে বাসা-বাড়িতে রান্নার কাজ হচ্ছে মাটির চুলায়, কোথাও সিলিন্ডার গ্যাসে। কারখানার মালিকরা বলছেন, কারখানার ব্রয়লার চালানোর জন্য প্রতি ঘনফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকা দরকার। কিন্তু অনেক কারখানায় চাপ কমে প্রতি ঘনফুটে দেড় থেকে ৩ পিএসআইতে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোথাও শূন্যে নেমেছে। পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান গতকাল বলেন, ‘একটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গড়ে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো, মঙ্গলবার রাতে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এলএনজির সরবরাহ কমে ২৫০ থেকে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমেছে। এখন এই এলএনজি শুধু চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ  কেন্দ্র, সার কারখানা ও শিল্পসহ আবাসিকে সরবরাহ হচ্ছে। ঢাকা ও কুমিল্লা অঞ্চলগুলোতে এলএনজির সরবরাহ বন্ধ থাকায় গ্যাস সংকট কিছুটা বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন মেরামতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরোদমে কাজ করছে। আমরা তাদের আগামী দুই দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পাইপলাইন মেরামত শেষ করে পুনরায় এলএনজি সরবরাহ করা যাবে।’

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে পেট্রোবাংলা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কারণে মহেশখালী ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল হতে এলএনজি সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিতরণ এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে।

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গত ২৭ মে থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে একটি টার্মিনালের। এতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় জাতীয় গ্রিডে এলএনজির সরবরাহ প্রায় সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমে শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন খাতে গ্যাসের সরবরাহ সংকট চলছিল। চলমান এই গ্যাস সংকটের মধ্যে এবার আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্যাসের সংকট আরও বেড়ে গেছে।

সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, ‘সিএনজি স্টেশনগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংকট চলছে, এখন এলএনজির সরবরাহ কমে যাওয়া গ্যাস সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় গাড়িতে গ্যাস নিতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। এতে প্রত্যেকটি স্টেশনে গাড়ির লম্বা লাইন জমেছে।’

পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, গতকাল একটি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় আরেকটি টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ করা হয় গড়ে ২৫০ থেকে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। যদিও ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার দুটি টার্মিনাল থেকে স্বাভাবিক সময়ে এলএনজি রূপান্তরের মাধ্যমে ১০৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হতো।

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে দায়িত্বে থাকা একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ঘণ্টাপ্রতি উৎপাদন চিত্রে দেখা গেছে, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন এক দিনের ব্যবধানে ১২৫০ মেগাওয়াট কমেছে। গতকাল দুপুর ৩টার দিকে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হয় ৩ হাজার ৮৭৯ মেগাওয়াট। এক দিন আগে মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হয় ৫ হাজার ১৩১ মেগাওয়াট। পিজিসিবির তথ্যে আরও দেখা গেছে, গতকাল দুপুর ৩টার দিকে ১৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১২ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট। ওই সময় লোডশেডিং ছিল ২ হাজার ৬৯ মেগাওয়াট।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর