সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভাড়া ভবনে চলছে সিএমপির থানা-ফাঁড়ির কার্যক্রম

বিঘ্নিত হচ্ছে পুলিশি সেবা পরিবেশ

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

১৯৮৮ সালে যাত্রা শুরু করে নগরীর ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ি। শুরু থেকে এই পুলিশ ফাঁড়ি ভাড়া জায়গার ওপর চালিয়ে আসছে কার্যক্রম। ৩৬ বছর পার করলেও এখনো স্থায়ী ভবন মেলেনি। বর্তমানে তিন তলা ভবনের একটি ফ্লোরে মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে চলছে পুলিশি সেবা। যদিও চার বছর আগে ভাড়া ছিল ১৭-১৮ হাজার টাকা। কিন্তু গত চার বছরে ভাড়া গুনতে হয়েছে ২৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে চার শতক জমি ক্রয় করে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে ফাঁড়ির জন্য। কিন্তু নানা জটিলতায় হচ্ছে না স্থায়ী ভবন নির্মাণকাজ। শুধু এই পুলিশ ফাঁড়ি নয়, একই চিত্র ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগেরও। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নগরীর রেলওয়ে সুপার মার্কেটে মাসিক ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকায় ভাড়া ভবনে চলছে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম। চলতি বছরের মে পর্যন্ত ২৮ মাসে ভাড়া বাবদ ব্যয় করেছে ভ্যাট ছাড়া ৯২ লাখ ৯২ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাড়ার পেছনে যে টাকা ব্যয় করা হচ্ছে তা দিয়েই এতদিনে নিজস্ব জায়গা ক্রয় করে ভবন নির্মাণ করা কোনো বিষয় ছিল না। কিন্তু অন্যান্য সংস্থার মতো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুধু নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন, বাহিনীর জন্য কিছু করতে সেভাবে ভূমিকা রাখেন না। ফলে সরকারের রাজস্ব থেকে ভাড়া বাবদে বিপুল টাকা যাচ্ছে ভাড়া ভবনের পেছনে। পাশাপাশি ভাড়া ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। এ ছাড়াও গাদাগাদি করে থাকতে হয় বেশির ভাগ সদস্যকে।

সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, কর্ণফুলী, আকবর শাহ, বাকলিয়া থানা এখন ভাড়া বাসায় আছে। আসকারদীঘি ও ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়িও ভাড়া জায়গায় আছে। এর মধ্যে বাকলিয়া, কর্ণফুলী ও পতেঙ্গা থানার জায়গা রয়েছে। ভবন নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার আগেই করোনার মহামারি শুরু হয়। যার কারণে থানা ভবন নির্মাণকাজ শুরু করা হয়নি। এখন নতুন করে থানা ভবনের কাজ হবে, এ প্রকল্পগুলো এখন পাইপলাইনে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা পুলিশি কার্যক্রম চালানোর জন্য ভাড়া ভবন খুঁজে পাই না। অনেক বাড়িওয়ালা ফাঁড়ি বা থানা ভবনের জন্য বাড়ি ভাড়া দেয় না। কারণ থানা-ফাঁড়িতে অনেক লোক আসবে, যাবে। এতে আশপাশে ভাড়াটিয়াদের সমস্যার মুখে পড়তে হবে, এমন শঙ্কায় থাকে সবাই। এ ছাড়াও থানা বা ফাঁড়ি এলাকায় পেতে কষ্টকর হয়ে যায়। আমাদের মাসিক কল্যাণ সভায় এসব বিষয়ে কেউ কথা বলে না। যদি এসব সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়, তাহলে তো একটা সুরাহা হবে। না বললে কেউ তো আর এসে এসব সমস্যা সমাধান করে দেবে না।

জানা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৬টি থানার মধ্যে আকবর শাহ, ইপিজেড, কর্ণফুলী ও বাকলিয়া থানার কোনো নিজস্ব ভবন নেই। এর মধ্যে চারটি থানার কার্যক্রম চলছে ভাড়া জমিতে। তার মধ্যে আকবর শাহ থানার কার্যক্রম কৈবল্যধাম হাউজিং এস্টেটের প্রশাসনিক ভবনে ভাড়ায় চলছে। ইপিজেড থানার কার্যক্রম চলছে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া জমিতে। চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে চলছে কর্ণফুলী থানার কাজ। বাকলিয়া থানা চলছে কল্পলোক আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া ভবনে। আকবর শাহ থানা ছাড়া বাকি তিনটি থানার জন্য থানা-কাম ব্যারাক ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও সিএমপিতে পুলিশ ফাঁড়ি আছে ৩১টি। নিজস্ব জায়গায় ১৪টি এবং অন্যান্য সংস্থার জায়গায় চলছে ১৫টি। আসকারদীঘি ও ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ি চলছে ভাড়া বাসায়। পুলিশ বক্স রয়েছে ৬টি, একটি চলছে নিজস্ব ভবনে। বাকি ৫টির মধ্যে টাইগারপাস পুলিশ বক্স রেলওয়ের জায়গায়, মোহরা পুলিশ বক্স সিডিএর জায়গায়, অক্সিজেন ও অলংকার পুলিশ বক্স সওজের জায়গায় এবং সল্টগোলা পুলিশ বক্স চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গায় কার্যক্রম চালাচ্ছে। সিএমপির ৫টি তদন্ত কেন্দ্রের মধ্যে ফয়’স লেক তদন্ত কেন্দ্র পরিচালিত হয় রেলওয়ের জায়গায় কনকর্ড গ্রুপের নিজস্ব সেমিপাকা ভবনে। বাকি ডাঙ্গারচর, চাক্তাই, রাঙ্গাদিয়া ও গুপ্তখাল তদন্ত কেন্দ্র চলছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জায়গায়। একইভাবে সদরঘাট এলাকার রেলওয়ে সুপার মার্কেটের একটি অংশ সাড়ে ৩ লাখ টাকা ভাড়া নিয়ে চলছে সিএমপির যানবাহন (ট্রাফিক) দক্ষিণ বিভাগের কার্যক্রম। ট্রাফিক উত্তর, দক্ষিণ ও বন্দর বিভাগের যানবাহন শাখার কার্যক্রম চলছে ভাড়া ভবনে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর