বগুড়ায় সড়ক-মহাসড়কে গাছ না থাকায় বাড়ছে দাবদাহ। সড়ক প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের কারণে দুই পাশের গাছ কেটে ফেলায় সৌন্দর্য নষ্ট, ছায়া ও পরিবেশের ভারাসাম্য রক্ষা পাচ্ছে না বগুড়ায়। এসব সড়কে নতুন করে গাছ লাগানো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। যার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে এবং তীব্র দাবদাহ চলছে এই জেলায়।

জানা যায়, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশে ২৫ ভাগ বনভূমি বা গাছপালা থাকা দরকার। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ১৫ ভাগ বনভূমি আছে। যার অধিকাংশই নানাভাবে সংকটাপন্ন। যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপ গাছ, জলাভূমি ও সবুজবলয়। প্রতিদিনই গাছ উজাড় হচ্ছে, সৃজন হচ্ছে না। যে কারণে প্রচ- দাবদাহ চলছে। চলছে পানির মহা সংকট। গরমে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। পাখিকুল আশ্রয় পাচ্ছে না। বগুড়ার প্রায় সড়কই এখন গাছ শূন্য হয়ে পড়েছে। যার ফলে সড়কের সৌন্দর্য, ছায়া ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সড়কের কাছে সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর নেই। যার ফলে জনজীবনে বাড়ছে নানা দুর্ভোগ। সড়ক-মহাসড়কে ৯০ দশকের লাগানো গাছগুলো কাটার পর নেওয়া হয়নি নতুন করে গাছ লাগানোর কোনো উদ্যোগ। সাধারণ পথচারীরা বলছেন, অধিকাংশ সড়কে কোনো গাছ নেই। শুধু বিল্ডিং আর বিল্ডিং। আগে শহরে রাস্তার দুই পাশেই বিভিন্ন ফলদ গাছ ছিল। সাধারণ মানুষ গাছের ছায়ায় বসে তপ্তদেহ শীতল করত। এখন গাছ না থাকার কারণে গরম বেড়েই চলছে।  বগুড়া-সারিয়াকান্দি সড়কটির দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। সড়কটি দিয়ে গাবতলী, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ বগুড়া জেলা সদরে যাতায়াত করেন। এ ছাড়াও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে কয়েক হাজার।

এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী জাহিদুল ইসলাম জানান, গত কয়েকবছর আগে এ সড়কটি দিয়ে বেশ ছায়াযুক্ত পরিবেশে যাতায়াত করতেন। সড়কের দুই পাশের গাছগুলো কর্তন করায় গত দুই বছর ধরেই প্রচ- রোদের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। গাছগুলো কর্তন করলেও নতুন করে গাছ লাগানোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

অটোরিকশাচালক রুহুল আমিন জানান, তিনি নিয়মিত ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি প্রায়ই সড়কের পাশে বসে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতেন। গাছগুলো কাটার পর আর বিশ্রাম নেওয়া হয় না। গাছের কারণে মানুষ স্বস্তিতে সড়কে চলাচল করতে পারত।

বগুড়া সামাজিক বন অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মতলুবুর রহমান জানান, এখন বাজেট নেই। বাজেট পাওয়া গেলে এই সড়কে গাছ লাগানো শুরু হবে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, দাবদাহ থেকে বাঁচতে আমাদের প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। বগুড়া জেলার প্রতিটি সড়ক, মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক সড়কে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের যে সব সড়কে গাছ নেই সেখানে অতি দ্রুত গাছ লাগানো হবে। সড়কের দুই পাশে গাছ থাকলে ছায়া হবে, সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাবে।