বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রিসাইডিং অফিসার অবরুদ্ধ জাল ভোটের উৎসব

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, শ্রীপুর থেকে ফিরে

প্রিসাইডিং অফিসার অবরুদ্ধ জাল ভোটের উৎসব

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তার কেওয়া তমিরউদ্দিন মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন মাওনা চৌরাস্তার ব্যবসায়ী শফিক। এ সময় কেন্দ্রের ভিতর সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার দুটি ব্যালট হাতে দেন। সিল মারতে গিয়ে দেখেন মেয়র পদের ব্যালট নাই। দায়িত্বরত সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়রের ভোট দিতে হবে না। এটা দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলরের ভোট দিয়া চুপচাপ চলে যান। ভোট কেন্দ্রের বাইরে শফিক বলেন, ‘ভোড তো দিছি, তয় মেয়ররে না। দিছি হুদা কাউন্সিলরকে।’ আর এমন চিত্র শুধু মাওনা চৌরাস্তার এই কেন্দ্রেই নয়। শ্রীপুর পৌরসভার ২২টি কেন্দ্রের অনেক কেন্দ্রেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে। শুধু শফিকই নয়, এমন কথা জানান অনেক ভোটার। আ. রহিম নামের আরেক ভোটার বলেন, ‘ভোট তো দিছি, তবে মেয়র পদে দিবার পারি নাই।’ এদিকে লোহাগাছ এলাকার আবদুল হাই বলেন, ‘ভোড সুষ্ঠু অয়ছে। তয় নৌকা ফাস।’ শ্রীপুরে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার ২ ঘণ্টা পর থেকে বেশির ভাগ কেন্দ্রই চলে যায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দখলে। পুলিশ ও প্রিসাইডিং অফিসারদের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা জাল ভোট দেন বলে অভিযোগ বিএনপির। অনেকটা দখল উৎসবে সম্পন্ন হয়েছে শ্রীপুর পৌর নির্বাচন। কোনো কেন্দ্রে হামলা, কোনো কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের কক্ষে তালা আবার কোনো কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই। আর দিনব্যাপী এমন চিত্রই ছিল এখানে। সাধারণ ভোটাররা ছিল শঙ্কিত। শ্রীপুরের প্রায় সব কেন্দ্রে সকাল ১১টা পর্যন্ত ছিল এক রকম। কিন্তু দুপুরের পর পাল্টে যায় চিত্র। সরেজমিনে গতকাল সাড়ে ১১টার দিকে শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিম খণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কড়াইতলা) কেন্দ্রের চারদিকে কঠোর নিরাপত্তা দেখা যায়। কিন্তু ভিতরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এই কেন্দ্রে সম্পূর্ণভাবে সাংবাদিক নিষিদ্ধ রয়েছে বলে জানায় দায়িত্বরত পুলিশ। বহু চেষ্টা করে ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতে একদল যুবক ব্যালট পেপারে সিল মারার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। একটু কাছে গেলে তড়িঘড়ি করে ব্যালটগুলো বেঞ্চের নিচে লুকানোর চেষ্টা করে। এসব দেখে ফেলায় উপস্থিত যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হুমকি দিয়ে বলে আপনারা কে, কী চান? আপনাদের দেখার কিছু নাই, খুব সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন চলছে। তবে এ সময় দায়িত্বরত প্রিসাডিং অফিসার এমদাদুলকে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রিসাইডিং অফিসার এমদাদুলকে ছাত্রলীগের লোকজন অবরুদ্ধ করে রেখেছে। শুধু তাই নয় এ কেন্দ্রের বিএনপির এজেন্ট তাইজুদ্দিনকে বের করে দেয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সম্বন্ধি (বউয়ের বড় ভাই) উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রউফ। খবর পেয়ে সকাল ১০টার একটু পরে ওই কেন্দ্রে হাজির হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আনিছুর রহমান ও বিএনপির প্রার্থী মো. শহীদুল্লাহ শহিদ। এ সময় সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দাবি করলেও বিএনপির প্রার্থী বলেন ভিন্ন কথা। তবে আবদুর রউফ অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সর্বশেষ খবর