বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাইরে শান্ত ভিতরে দখল

সিরাজগঞ্জ

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

বেলা ১টা। সিরাজগঞ্জ শহরের আলিয়া মাদ্রাসা। ভোটকক্ষের বাইরে পুলিশ-আনসার বাহিনী সজাগভাবে দায়িত্ব পালন করছে। কেন্দ্রের বাইরেই র্যাব-পুলিশ ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের কঠোর নজরদারি। পরিবেশ শান্ত। কিন্তু ভোটকক্ষের ভিতরের দৃশ্য পুরোপুরিই উল্টো। একটি কক্ষের ভিতর নির্বাক বসে আছেন পোলিং এজেন্টরা। সরকারি দলের ১০-১২ জন যুবক ব্যালট পেপার ছিঁড়ছে আর নৌকা প্রতীকে সিল মারছে। ভোট যাতে বাতিল না হয় সে জন্য কাউন্সিলরদের প্রতীকেও সিল মারছে। অন্য কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, পোলিং এজেন্ট ব্যালট পেপার নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু মেয়র পদের প্রতিটি ব্যালটেই নৌকা, কাউন্সিলর ডালিম ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের কেঁচি প্রতীকে সিল মারা। জিজ্ঞেস করলে পোলিং এজেন্ট মামুন বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই। পরিবার আছে। অসময়ে এতিম করতে চাই না তাদের। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন অফিসারের সামনেই তো এসব করা হচ্ছে।’ প্রতিটি কেন্দ্রেই বিএনপির সমর্থকরা গেলে হুমকি দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আর সাধারণ ভোটাররা গিয়ে দেখছেন তাদের ভোট হয়ে গেছে। ভোট দিতে না পেরে সরকারের প্রতি নানা ভাষায় বিরূপ মন্তব্য করে ফিরে যাচ্ছেন ভোটাররা। একই অবস্থা সিরাজগঞ্জ পৌরসভার রেলওয়ে কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিই ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, উত্তর সয়াধানগড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, দারুল ইসলাম একাডেমি, কোবদাসপাড়া, দিয়ারধানগড়া, ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রাশিদোজ্জাহা সরকারি মহিলা কলেজ, সবুজ কানন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নতুন ভাংগাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রানীগ্রাম বালিকা বিদ্যালয়, রজব আলী কলেজ, বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সয়াগোবিন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় ৪০টি কেন্দ্রের; বেলকুচি উপজেলার শেরনগর, চন্দনগাতী, বয়ড়াবাড়ী, আলহাজ সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয়, ক্ষিদ্রমাটিয়াসহ সব কটি; রায়গঞ্জ পৌরসভার প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র—৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রামাণিকপাড়া সরকারি প্রাথমিক ও মহিলা কলেজ; উল্লাপাড়া পৌরসভায় হামিদা পাইলট, এম আকবর কলেজ এবং শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র। বিএনপি পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ছয়টি পৌরসভায় পুরো সময় নির্বাচনী মাঠে থাকলেও শাহজাদপুরের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বেলকুচির মেয়র প্রার্থী রেজাউল হক, শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র প্রার্থী নুরুল হক কেন্দ্র দখল ও ভোটারদের ভোট দিতে না দেওয়ার অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন। শাহজাদপুরের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারছে, যে কারণে বেলা ৩টায় ভোট প্রত্যাখ্যান করেছি। সেই সঙ্গে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি।’ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, অবৈধ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো দিন হয়নি, হবেও না—এটি আরও একবার প্রমাণিত হলো। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মানুষ লাইন ধরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। র্যাব-পুলিশ-বিজিবি কঠোর নিরাপত্তায় ছিল। জোরপূর্বক সিল মারার প্রশ্নই ওঠে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর