সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে চুয়াডাঙ্গা

কৃষি পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ জেলা চুয়াডাঙ্গা। খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে এ জেলার গুরুত্ব রয়েছে দেশব্যাপী। সীমান্ত সংলগ্ন এ জেলায় শিক্ষা ও চিকিৎসায় ঘাটতি রয়েছে। জেলায় শিল্প-কলকারখানা না থাকায় উন্নয়ন ঘটেনি ব্যবসা-বাণিজ্যে। জেলায় কিছু কিছু সম্ভাবনা থাকলেও সমস্যা রয়েছে অনেক। ফলে পিছিয়ে রয়েছে এ জেলার মানুষ। জেলার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে জেলার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলা প্রতিনিধি জামান আখতার—

 

কৃষিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে 

—কৃষিবিদ রেজাউল করিম

বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম চুয়াডাঙ্গা। ধান, ভুট্টা ও সবজি উৎপাদনের জন্য এ জেলার মাটি খুবই উপযুক্ত। বর্তমানে আমদানি করা বিদেশি চালের কারণে জেলার ধানচাষিরা হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে অধিক ভুট্টা আবাদের ফলে প্রতি বছর কমে আসছে গমের আবাদ। এখনই ভুট্টাকে মানব খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন বিশিষ্ট কৃষিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার চাষাবাদে ব্যাপক উন্নতি করেছে জেলার কৃষকরা। তবে তা বেশির ভাগই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সরকারিভাবে কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং কৃষিপণ্যের প্রকৃত মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে এ জেলা কৃষিতে যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম। এ জেলার উৎপাদিত কৃষিপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। তবে এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবহনের সময় নানা কারণে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হয়। এ কারণে চুয়াডাঙ্গার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি উন্নত হিমায়িতকরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন করা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কৃষিবিদ।

 

কোচিং বাণিজ্যের কাছে অসহায় জেলাবাসী

—অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন, স্বাধীনতার পর উন্নয়নের কিছু সূচকে চুয়াডাঙ্গা জেলা এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে পড়া সূচকগুলোর মধ্যে এ জেলার শিক্ষা অন্যতম। চুয়াডাঙ্গা জেলায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মানসম্মত শিক্ষার ক্ষেত্রে এ জেলা দেশের অন্য অনেক জেলার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এ জেলায় অধিক হারে কোচিং বাণিজ্য জেলার শিক্ষাকে হুমকির মুখে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্রের অভাব রয়েছে। এ শিক্ষাবিদের মতে চুয়াডাঙ্গার যুবকদের দেশের জন্য সম্পদে রূপান্তরিত করতে হলে এ জেলায় মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মানসম্মত কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। উন্নত দেশগুলোর শিক্ষার সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে এ জেলাতেও গড়ে তুলতে হবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ দত্তনগর কৃষি খামারে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা গেলে এ জেলায় ছেলেমেয়েরা কৃষি শিক্ষায় আরও এগিয়ে যেতে পারত বলে মনে করেন তিনি।

 

বেসরকারি ক্লিনিক-প্যাথলজির স্বাস্থ্যসেবা নিম্নমানের

—ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী

চুয়াডাঙ্গা জেলার ১৬ লাখ মানুষের চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল থাকলেও এ হাসপাতালে জনবল রয়েছে ৫০ শয্যার। অথচ প্রায় প্রতিদিনই দুই শতাধিক রোগী এখানে ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ কারণে এ হাসপাতালে অর্ধেকের বেশি রোগী ওষুধ ও খাবার থেকে বঞ্চিত হন। এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে তিনটি। যেগুলোর অবস্থাও দীর্ঘদিন নাজুক অবস্থায় ছিল। যদিও বর্তমানে তা উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এ জেলায় বেসরকারি পর্যায়ের ক্লিনিক ও প্যাথলজির মাধ্যমে দেওয়া স্বাস্থ্যসেবার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। যা অনতিবিলম্বে কঠোর নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে আনা দরকার। এভাবে মত প্রকাশ করলেন বিএমএ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী। তিনি বলেন, ১০০ শয্যার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যেসব পদে জনবল নেই তার মধ্যে মেডিসিন কনসালটেন্ট পদটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বর্তমানে কোনো সার্জন নেই। আশার কথা, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। এ বছরের মধ্যেই এটি পূর্ণতা পেতে পারে। তাহলে জেলায় স্বাস্থ্যসেবা উন্নতি হবে বলে তিনি মনে করেন।

 

শিল্প-কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে

—শাহরিন হক মালিক

অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পিছিয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা। এ জেলাতে নেই গ্যাস সংযোগ, নেই বিসিক শিল্পনগরী, নেই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে গড়ে উঠেনি কোনো শিল্প-কলকারখানা। এ জেলার ব্যবসায়ীরাই প্রয়োজনীয় সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অন্য জেলাতে উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন। এ কারণে অন্য জেলার সঙ্গে উন্নয়ন দৌড়ে পিছিয়ে থাকছে চুয়াডাঙ্গা। এভাবেই বলছিলেন চুয়াডাঙ্গা শিল্প ও বণিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি শাহরিন হক মালিক। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ট্রেডিং ব্যবসা প্রচলিত। শুধু ট্রেডিং ব্যবসা দিয়ে জেলার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়। চুয়াডাঙ্গা জেলায় একাধিক শিল্প-কলকারখানা গড়ে তোলা ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি। এক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিদ্যুতের বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। কৃষিতে ব্যাপক উন্নত এ জেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। জেলার বাইপাস সড়ক নির্মাণ করতে হবে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু হওয়া দরকার। সীমান্ত এ জেলায় ভারতের সঙ্গে স্থলবন্দর জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর