শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোথাও জিনের বাদশা কোথাও তিনি পীর

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

কোথাও জিনের বাদশা, কোথাও তিনি পীর সাহেব। কোথাও আবার কবিরাজ। বিভিন্ন পরিচয় আর মামলাবাজিই তার পেশা। পঞ্চগড় সদর উপজেলার নাককাটি পাড়ার বাদশা মিঞা নতুন নতুন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। তার মামলার ফাঁদে প্রতিবন্ধী, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, মসজিদের ইমাম কেউই বাদ যাননি। এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে থানায় দুবার গণঅভিযোগ করেছেন। বাদশার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই জড়িয়ে দেওয়া হয় মামলায়। সরেজমিন জানা যায়, জিনের কাছ থেকে সোনার পুতুল এনে দেবে বলে এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। ডাঙ্গাপাড়ার টুনু মিঞা বলেন, ‘বাদশা আমাকে তার বাড়িতে ডেকে সোনার পুতুলের ছবি দেখাতেন। এই পুতুল আমাকে দেবে বলে প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়েছেন। বাদশা আমাকে কী যেন খাওয়ান। তারপর তিনি যা বলেন আমি তাই করি। আজ আমি সর্বস্বান্ত।’ স্থানীয় হাঁড়িভাষা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, বাদশা মিঞা নিজেকে পীর দাবি করেন। তিনি জিনের কাছ থেকে অনেক টাকা এনে দেবেন বলে বহু মানুষের সর্বনাশ করেছেন। বিভিন্ন মামলার কাগজপত্র এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহজ-সরল লোকদের তিনি মামলার জালে ফেলেন। পরে লাখ লাখ টাকা নিয়ে মীমাংসা করে দেন। ২১০ জন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগে জানা যায়— পাহাড়বাড়ি গ্রামের মৃত আবদুল কাদেরের প্রতিবন্ধী ছেলে জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীরের মা রহিমাও প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী আর বয়স্কভাতা নিয়েই তাদের সংসার চলে। কথিত পীর বাদশা তার স্কুলপড়ুয়া ভাতিজি আঁখি মণিকে (১৭) প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিয়ে দেন। পরে নাবালিকা বলে রেজিস্ট্রি করার নাম করে জাহাঙ্গীরের মায়ের কষ্ট করে জমানো ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। কিছুদিন পর আঁখিকে বাড়ি নিয়ে এসে করেন অপহরণ মামলা। ওই মামলায় জাহাঙ্গীর, তার চাচা মোস্তফা ও ফুপা হরমুজ পলাতক। এ ব্যাপারে বাদশা মিঞার সাঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত বলে জানান। পরে নিজেই এই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে সংবাদ না ছাপানোর অনুরোধ করেন। বাদশা বলেন, ‘আমি একজন পীর। আমার বাবাও পীর ছিলেন। টুকিটাকি কবিরাজি করি। জিনের বাদশা আমি কেউ নয়। মামলাবাজও নয়। দেড় মাস ধরে এলাকায় থাকতে পারছি না। এলাকাবাসী আমাকে ঘরছাড়া করেছে। আমার বিরুদ্ধে ২১০০ লোক সাক্ষ্য দিতে পারে। কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। আমি মাইজভাণ্ডারী তরিকার লোক। ডিসি আমাকে পারমিশন দিছেন।’ সদর থানার ওসি মমিনুল ইসলাম জানান, শত শত মানুষ বাদশার বিপক্ষে কথা বলেন। এ পর্যন্ত যে মামলাগুলো তিনি করেছিলেন তা অধিকাংশই ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।

সর্বশেষ খবর