রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

১০ টাকার চালের তালিকায় বিত্তশালী মৃত ব্যক্তি

সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ইউনিয়নে কার্ড ছাড়াই প্রভাবশালীরা ডিলারের কাছ থেকে নিয়েছেন ১০ টাকা কেজির চাল। অভিযোগ রয়েছে বিত্তশালী ও মৃত ব্যক্তির নামে কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার। এমন নানা অনিয়মের কারণে ওই ইউনিয়নে প্রকৃত হতদরিদ্ররা ১০ টাকা কেজির চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

সেপ্টেম্বরে বরাদ্দ চাল তালিকাভুক্তদের কাছে বিক্রি না করে অন্যত্র বিক্রির বিষয়টি জানতে পেয়ে ইউএনও ওই ইউনিয়নের ডিলার খাইরুল ইসলামকে ডেকে পাঠান। ডিলার তালিকাভুক্তদের পুনরায় চাল দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খাওয়ার অযোগ্য ৮৬ বস্তা চাল কিনে শুক্রবার পুনরায় তা দরিদ্রদের কাছে বিক্রি করেছেন তিনি। এ ছাড়া হতদরিদ্রদের তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকের নামে কার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও ওই ইউনিয়নে কার্ড বিতরণ না করে ভোটার আইডির মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হচ্ছে।

ইউপি সদস্য কাশেম আলী জানান, চেয়ারম্যান জাতীয় পরিচয়পত্রে মেম্বারদের স্বাক্ষর নিয়ে ডিলারের কাছ থেকে চাল কিনতে বলেছেন। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচয়পত্র শনাক্ত করে দেওয়ার পরও দরিদ্রদের কাছে চাল বিক্রি করা হচ্ছে না। ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান, আবুল হাসেম ও আমিনুর রহমান জানান, তাদের না জানিয়ে চেয়ারম্যান তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকার বেশির ভাগ ব্যক্তি অবস্থাশালী। মৃত আবদুল কুদ্দুছ মিয়ার নামও রয়েছে। ডিলারের ব্যবসায়িক পার্টনার মাজেদুর রহমান জানান, এলাকার গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মনির আহমেদ, প্রভাবশালী শাহজামাল, ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন, রবি ও খন্দকার নুরুল ইসলাম এ চাল নিয়েছেন। তাদের নামে কার্ড না থাকলেও দাপট দেখিয়ে তারা চাল নেন। এ ছাড়া বানাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সম্পাদক আরিফুর রহমান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য জুলফিকার, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আব্বাস মাস্টারসহ অনেকে দুই বস্তা করে চাল নিয়েছেন। এ কারণে সেপ্টেম্বরে চাল কম পড়ে যায়। এ ব্যাপরে জানতে গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মনির আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, দুই বস্তা চাল নিয়ে তিনি চারজনের মধ্যে বিতরণ করেছেন। ডিলার খাইরুল ইসলাম জানান, প্রভাবশালীরা তার কাছ থেকে নানা কৌশলে চাল নিয়েছেন। এ কারণে চাল কম পড়েছে বলে ইউএনও তাকে ডেকে পাঠান। পরে বঞ্চিত ১৪৪ জনের মধ্যে পুনরায় চাল বিক্রির আশ্বাস দিলে ছেড়ে দেন। বানাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম কবির জানান, চেয়ারম্যান ইচ্ছামতো দরিদ্রদের বাদ দিয়ে পছন্দের লোকদের নামে তালিকা করেছেন। যার মধ্যে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তিও রয়েছেন। বিষয়টি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে জানানোর পরও ব্যবস্থা নেননি। ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। ইউএনও মাসুম আহমেদ বলেন, ২০১১ সালে করা দরিদ্রদের তালিকা হালনাগদ করতে বলা হয়েছিল। এতে ধনী ও মৃত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক       জায়গায় তা হয়নি।

বগুড়ায় ১৩৬৫ কার্ড বাতিল : নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া জানান, শেরপুর উপজেলায় কালোবাজারি করে ১০ টাকা কেজির চাল কেনায় সৈয়দ আলী নামে এক ব্যক্তিকে গতকাল চার দিনের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সৈয়দ আলী সীমাবাড়ী ইউনিয়নের বেটখৈর গ্রামের নয়ন প্রামাণিকের ছেলে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এ চাল বিতরণের জন্য তালিকা সংশোধন করে ১ হাজার ৩৬৫টি কার্ড বাতিল করা হয়েছে। শেরপুরের ইউএনও জানান, সেপ্টেম্বরে এ উপজেলায় হতদরিদ্রের মধ্যে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ শুরু হয়। পুরনো তালিকা অনুযায়ী প্রথম কিস্তির চাল বিতরণের সময় ত্রুটিবিচ্যুতি দেখা দেয়। পরে সাময়িকভাবে বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ রেখে তালিকা সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর